আজ ৮ জুলাই নাসরিন ট্রাজেডির ১৪ বছর পূর্ণ হলো। ২০০৩ সালের এই দিনে সহস্রাধিক যাত্রী নিয়ে এমভি নাসরিন-১ লঞ্চ ঢাকা থেকে ভোলার লালমোহনে যাওয়ার পথে চাঁদপুরের মেঘনা-ডাকাতিয়া নদীর মোহনায় ডুবে যায়। এতে প্রায় ৩০৯ জনের প্রাণহানি ঘটে। প্রতি বছর ভোলাবাসী নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করে আসছে। এদিকে ১৪ বছর পরও ক্ষতিপূরণের আশায় দিন গুণছে হতাহতদেরপায়নি নিহতদের পরিবার।
দেশের বৃহত্তর দ্বীপ জেলা ভোলা থেকে ঢাকাসহ সারাদেশে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম নৌপথ। কিন্তু নিয়মনীতি আর যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা না করে পুরোনো ঝুঁকিপূর্ণ লঞ্চগুলো যাত্রী পরিবহন করছে এই রুটে। অধিক লাভের প্রত্যাশায় ধারণ ক্ষমতার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি যাত্রী পরিবহন করায় প্রায়ই ঘটছে লঞ্চ ডুবির ঘটনা। ভোলাবাসীর জন্য এমনই একটি ভয়াবহ দুর্ঘটনা হচ্ছে এমভি নাসরিন-১ লঞ্চডুবি। এই দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় জেলার লালমোহন ও চরফ্যাশন উপজেলার মানুষ। ওই দুই উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে এখনও শোক বিরাজ করছে দুর্ঘটনায় নিহত, নিখোঁজ বা আহতদের পরিবারগুলোতে। পরিবারের উপার্জনক্ষম সদস্যদের হারিয়ে অভাব অনটনের মধ্যদিয়ে দিন কাটছে অনেকের। এরপর আরও বেশ কয়েকটি লঞ্চ দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব দুর্ঘটনার পর ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো যতসামান্য ক্ষতিপূরণ পেয়ে থাকে। কিন্তু ওই সামান্য ক্ষতিপূরণ তাদের বিশেষ কোন উপকারে আসে না। তেমনি নাসরিন লঞ্চডুবির পর সরকার জনপ্রতি ১৫ হাজার টাকা আর্থিক সাহায্য দেয়। কিন্তু বাংলাদেশ লিগাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট “ব্লাস্ট” ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পক্ষে ২০০৪ সালের ৫ জুলাই ঢাকার তৃতীয় যুগ্ম জেলা জজ আদালতে ক্ষতিপূরণের দাবিতে একটি মামলা দায়ের করে। আদালত ২০১৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি নিহত ও নিখোঁজ প্রত্যেক পরিবারকে ১০ লাখ টাকা এবং আহত প্রত্যেককে ১ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ প্রদানের রায় দেন। এতে আপত্তি জানিয়ে বিবাদী পক্ষ ২০১৬ সালের ২৪ অক্টোবর হাইকোর্টে রিভিশন মামলা দায়ের করে। হাইকোর্ট গত ৫ জুন নিম্ম আদালতের রায় বহাল রাখেন।
কিন্তু ক্ষতিগ্রস্তরা কবে নাগাদ ক্ষতিপূরণের টাকা পাবেন তা কেউ জানে না। তবে মামলা দায়েরকারী প্রতিষ্ঠান ব্লাস্টে’র উপদেষ্টা এবং সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নিজামুল হক জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্তরা যাতে দ্রুত ক্ষতিপূরণের টাকা পেতে পারেন সে জন্য তারা কাজ করে যাচ্ছেন।
এদিকে আদালতের নির্দেশনা কিভাবে বাস্তবায়ন করা যায় সে লক্ষ্যে ৬ জুলাই বৃহস্পতিবার ভোলা আইনজীবী সমিতির সম্মেলন কক্ষে ব্লাস্ট এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। এতে বিচারক, আইনজীবী ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষসহ নাসরিন ট্রাজেডিতে ক্ষতিগ্রস্তরা অংশগ্রহণ করে দ্রুত আদালতের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান।
বিডি-প্রতিদিন/০৮ জুলাই, ২০১৭/মাহবুব