যমুনায় পানি বাড়ার সাথে সাথে নদী তীরবর্তী এলাকায় শুরু হয়েছে ভাঙন। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে নদীপাড়ের বাসিন্দারা। একই সাথে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে সহস্রাধিক পরিবার। ভাঙনরোধে পানি উন্নয়ন ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো ভাঙনের মুখে থাকা বসতিবাড়ি সরিয়ে নিতে বলছে। আর পানিবন্দী মানুষেরা অর্ধাহারে-অনাহারে মানবেতর জীবনযাপন করলেও তাদের পাশে কেউ সহযোগিতার হাত বাড়াচ্ছে না।
জানা যায়, প্রবল বর্ষণ আর পাহাড়ির ঢলের কারণে গত এক সপ্তাহ ধরে যমুনার নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার ২০ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানির প্রবল স্রোতে সিরাজগঞ্জ সদরের বাহুকা থেকে কাজিপুর উপজেলার ক্ষুদ্ধবান্ধি পর্যন্ত দশ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানের পুরাতন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে যাওয়াসহ প্রায় পাঁচ শতাধিক বসতভিটা বিলীন হয়ে গেছে। সর্বস্ব হারিয়ে ভাঙন কবলিতরা অসহায় হয়ে পড়েছে। আর ভাঙা অংশ দিয়ে পানি প্রবেশ করে সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ৭ দিন যাবত পানিবন্দী থাকলেও সরকারী কোন সহায়তা এখন পর্যন্ত তাদের কাছে পৌঁছায়নি। পরিবারগুলো শিশু সন্তানদের নিয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে জীবনযাপন করছে। অন্যদিকে ১০৯ কোটি ব্যয়ে চৌহালী উপজেলা সদর রক্ষা বাঁধে ফের ধস নেমেছে। শুক্রবার রাতে খাসকাউলিয়া ইউপির হাজী মজিবর রহমান ব্রীজ থেকে সিদ্দিকের বাড়ী পর্যন্ত ৭০ মিটার এলাকা ধসে যায়। বার বার বাঁধে ধস নামায় এলাকাবাসীর মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। এতে পাউবো কর্মকর্তারাও হতবিহল হয়ে পড়েছে।
বাহুকা-শুভগাছা টুটুলের মোড় এলাকায় ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে।
শুভগাছা টুটুল মোড়ের বাসিন্দা আবুল কালাম জানান, প্রায় একমাস আগে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে যায়। পানি বাড়ার সাথে সাথে ভাঙ্গা অংশ দিয়ে পানি ঢুকে প্রায় সহাস্রাদিক বসতবাড়ি পানির নীচে তলিয়ে যায়। সাহায্য তো দূরের সাতদিন যাবত পানিবন্দী থাকলেও কেউ আমাদের দেখতেও আসেনি।
পানিবন্দী মাহেলা খাতুন, জোসনা বেগম জানান, আমরা খুব কষ্টে আছি। রান্না করার খুবই কষ্ট হয়ে পড়েছে। ছোট ছোট ছেলেদের মুখে খাবার তুলে দিতে পারছি না। তারা খেয়ে না খেয়ে রয়েছে। আফসার আলী জানান, টিউবওয়েলগুলো পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
বাহুকা গ্রামের আবব্বাস আলী, হানিফ সেখ জানান, পানি বাড়ার সাথে বাহুকা থেকে ক্ষুদবান্ধি পর্যন্ত ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। কিন্তু পাউবো কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আবুল কাসেম ফজলুল হক জানান, পাউবো বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ দেয়, যাতে গ্রামে পানি প্রবেশ না করে। কিন্তু ভেঙে গেলে পাউবোর কিছু করার থাকে না। পুরাতন বাঁধ ভেঙে যাওয়া এক কিলোমিটার পিছনে নতুন মাটির বাঁধ দেয়া হচ্ছে। এখন বাঁধের বাইরে যারা পড়বে তাদেরকে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে সরে আসতে হবে। ভাঙনরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না কেন-এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, স্থায়ী বাঁধ না হওয়া পর্যন্ত ভাঙন রোধ করা সম্ভব নয়। তারপরেও ভাঙন যাতে কমে সে জন্য জিওব্যাগ নিক্ষেপ করা হচ্ছে। বাজেট বরাদ্দ পেলে শুষ্ক মৌসুমে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হবে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুর রহিম জানান, এখন পর্যন্ত পানিবন্দীর কোন রিপোর্ট আমাদের হাতে নেই। যে কারণে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। তবে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিডি-প্রতিদিন/০৮ জুলাই, ২০১৭/মাহবুব