মুক্তামনি। বয়স ১২। যে বয়সে বন্ধুদের সঙ্গে দৌরাত্মপানায় মেতে থাকার কথা, সেই বয়সে মৃত্যুর প্রহর গুণছে মুক্তামনি। সে নিজেও জানে না যে তার উপর ভর করেছে এক অজানা ব্যাধি। তৃতীয় শ্রেণির মেধাবী ছাত্রী মুক্তামনির ডান হাত দেহের সব অঙ্গের চেয়েও ভারি হয়ে উঠেছে। ভেতরে পোকা জন্মেছে। বিকট যন্ত্রণায় মুক্তামনি সব সময় ছটফট করছে। যতই দিন যাচ্ছে ততই মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছে মুক্তামনি।
সাতক্ষীরার দক্ষিণ কামারবায়সা গ্রামের মুদি দোকানি ইব্রাহীম হোসেনের পরিবারে জন্ম নেয় দুই যমজ সন্তান হীরামনি ও মুক্তামনি। জন্মের প্রথম দেড় বছর যাবৎ ভালোই ছিল ফুটফুটে দুই শিশু হীরা ও মুক্তা। কিছুদিন পর মুক্তার ডান হাতে একটি ছোট ফোঁড়ার মত গোটা দেখা দেয়। এরপর থেকে মুক্তামনির ব্যাধির মাত্রা বেড়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় তার চলাফেরা, স্কুলে যাওয়া, খেলাধুলা। চার বছর ধরে অসহ্য ব্যথা ও যন্ত্রণা তাকে দিন দিন মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। মুক্তামনি এখন বসতে পারে না। খেলতে পারে না। এমনকি স্কুলেও যেতে পারে না। দিনরাত কেবল শুয়ে কাটাতে হয় তাকে। যতই দিন যাচ্ছে ততই মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছে মুক্তামনি।
মুক্তার বাবা ইব্রাহীম হোসেন জানান, খুলনা, যশোর, সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েছি। হাসপাতালের চিকিৎসকদের মধ্যে কেউ বলেছে হাড়ের ইনফেকশন।
খুলনা ২৫০ শয্যা হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ এক চিকিৎসক বলছেন হাড়ের ক্যানসার আবার যশোরের কুইন্স হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার চিকিৎসক গোলাম কিবরিয়া বললেন রক্তে টিউমারের কথা। কিন্তু সেখানে চিকিৎসা করে কোনো কাজ হয়নি।
সর্বশেষ রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে নেয়া হলে তারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে রেফার্ড করে। এরপর সেখানে এক চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা করানো হয়েছে। তিনি বলছেন, মেয়ের ওই হাতে বনটিউমার হয়েছে। সেখানে দীর্ঘদিন চিকিৎসা করেও কোন ফল হয়নি।
মুক্তার বাবা বিভিন্ন হাসপাতালে এভাবে অনেক ডাক্তার দেখিয়েছেন কিন্তু তাতে কোন লাভ হয়নি। কেউ কোনো সঠিক চিকিৎসা দিতে পারেননি। রোগের মাত্রা শুধু বেড়েই চলেছে। হতাশ বাবা ইব্রাহীম গত ছয় মাস যাবৎ চিকিৎসাবিহীন অবস্থায় মুক্তাকে বাড়িতে রেখে কেবল ড্রেসিং করে চলেছেন। এরই মধ্যে আক্রান্ত হাত ক্রমেই ভারি হয়ে উঠছে। পোকা ধরেছে। মশা ও মাছির উৎপাত বাড়ছে। বাড়িময় বিকট গন্ধ ছুটছে। এ কারণে তাদের বাড়িতে আত্মীয় স্বজনরা আসতে চায় না। গ্রামের লোকজনও শুধু দূর থেকে এক নজরে দেখে চলে যায়।
এখন রোগটি সংক্রমিত হওয়ার ভয়ে মুক্তার পরিবার তাকে সমাজ থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্নভাবে রেখেছেন। মুক্তামনির মা আছমা খাতুন মেয়েকে সুস্থ করতে সমাজের বিত্তবানদের কাছে সাহায্য চেয়েছেন।
এদিকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক নাসির উদ্দিন জানান, মুক্তামনির এ রোগটি বিরল।প্রাথমিকভাবে এটি হাইপারকেরাটসিস বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এটি স্কীন ক্যান্সারও হতে পারে। বাংলাদেশে এর চিকিৎসা আছে। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় অথবা ঢাকা মেডিকেলে এই রোগের চিকিৎসা করা সম্ভব। দ্রুত মেডিকেল বোর্ড গঠন করে উন্নত চিকিৎসা দিলে শিশুটিকে বাঁচানো সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
বিডি প্রতিদিন/০৮ জুলাই ২০১৭/আরাফাত