উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর গত কদিনের মাঝারি ও ভারী বর্ষণের কারণে যমুনার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি বৃদ্ধি পেয়ে নদী এলাকার নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে।
শনিবার যমুনার পানি বগুড়ার সারিয়াকান্দি পয়েন্টে বিপদ সীমার ২১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই অবস্থা দাঁড়িয়েছে বগুড়ার ধুনট উপজেলায়। দুইটি উপজেলায় যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন এ পর্যন্ত প্রায় ৪ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
জানা যায়, শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত যমুনার পানি বিপদ সীমার ২১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় সারিয়াকান্দির কুতুবপুর, বয়রাকান্দি, চন্দনবাইশা এবং কামালপুর ইউনিয়নের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পূর্বাংশে পানি প্রবেশ করেছে।
এদিকে, সারিয়াকান্দির যমুনা চরের কর্ণিবাড়ি, কাজলা, চর-চালুয়াবাড়ি ও বোহাইল ইউনিয়নের নিচু এলাকার জায়গা-জমি ও বাড়ি ঘরে পানি ঢুকে পড়েছে।
যমুনার পানি বাড়ার কারণে নিচু এলাকায় পানি প্রবেশ করতে শুরু করছে। ফলে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিতে শুরু করেছে যমুনা পাড়ের মানুষ। এছাড়াও চরাঞ্চলসহ নিচু এলাকার পাটের জমিতে পানি প্রবেশ করায় ফসলহানির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে নিচু এলাকার ৪ হাজার পরিবারের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বিপদের আশঙ্কায় বন্যার্তদের অনেকেই আসবাবপত্র এবং ঘরের চাল নিয়ে বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে।
বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সহকারী প্রকৌশলী হারুনর রশিদ জানান, গত কয়েক দিন ধরে যমুনা নদীর পানি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে শনিবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত বগুড়ার ধুনটের শহড়াবাড়ি ঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
ধুনট উপজেলার ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন শ্যামল বলেন, পানি বৃদ্ধি পেয়ে যমুনা নদীর কূল উপচে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাধের অভ্যন্তরে (পূর্ব পাশে) মাধবডাঙ্গা, ভুতবাড়ি, পুকুরিয়া, কৈয়াগাড়ি, বানিয়াজান, শিমুলবাড়ি, রাধানগর, বৈশাখী ও শহড়াবাড়ি গ্রামের বাড়িঘর ডুবে যাচ্ছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ২ হাজার পরিবার। এর মধ্যে অনেক পরিবারের লোকজন নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিচ্ছে। এ বিষয়টি ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন মহলে অবহিত করা হয়েছে।
বগুড়া জেলা সির্ভিল সার্জন অফিস সূত্র জানিয়েছে, বন্যা উপদ্রপ এলাকায় ৯টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। এসব টিমের মাধ্যমে প্রাথমিক চিকিৎসাসহ খাবার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও খাবার স্যালাইন বিতরণ করা হচ্ছে। এছাড়াও বিপুল পরিমাণ ওষুধ ও খাবার স্যালাইন মজুদ রয়েছে। প্রয়োজনে বন্যা দুর্গত লোকজনের মাঝে এসব বিতরণ করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
অপরদিকে, সারিয়াকান্দি উপজেলার যমুনা নদীর ডানতীরে কামালপুর, কুতুবপুর ও চন্দনবাইশায় নদী ভাঙ্গন আতঙ্ক বিরাজ করছে।
সারিায়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান জানান, জেলা প্রশাসক তাৎক্ষিকভাবে বন্যার্তদের জন্য ৫০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করেছেন। আরো ৩০০ মেট্রিক টন চাল এবং শুকনো খাবারের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগে আবেদন করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রুহুল আমিন জানান, বগুড়ার সারিয়াকান্দ পয়েন্টে এখন পর্যন্ত ২০ সেন্টিমিটার বিপদ সীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাধ সুরক্ষিত আছে। নদীর পাড়ে কিছু নিচু এলাকায় পানি প্রবশে করেছে।
বিডি প্রতিদিন/০৮ জুলাই ২০১৭/আরাফাত