বাগেরহাট জেলা কারাগারের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। বাগেরহাট কারাগারের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনে সংবাদ প্রকাশের পর সরকারের উচ্চ মহলের নির্দেশে গঠিত নির্বাহী বিভাগের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে দুর্নীতির এই চিত্র ফুটে উঠেছে। তদন্ত প্রতিবেদনে জেলা কারাগারের শীর্ষ কর্মকর্তাসহ চার জনের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমান বাগেরহাট জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দাখিলকৃত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
বাগেরহাট নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার নাজিম উদ্দিন ৪২ পাতার তদন্ত প্রতিবেদন জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাসের কাছে জমা দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তদন্ত প্রতিবেদনে জেলা কারাগারের সুপার গোলাম দস্তগীর, ডেপুটি জেলার মো: শেখ রাসেল, প্রধান কারারক্ষী মো. দেলোয়ার হোসেন ও কারারক্ষী শরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে কারাগারের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি সিডিসহ প্রমানের তথ্য ও উপাত্ত প্রতিবেদনে সংযুক্ত করা হয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ওই প্রতিবেদনে কারাগারের মসজিদের অনুদানের ৫ মাসের টাকা জমা-খরচের খাতায় জমা না দিয়ে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করাসহ করাগারের স্টাফদের কাছ থেকে মসজিদের নামে নেয়া অর্থও আত্মসাত করার ঘটনা ঘটেছে। কারাগারের অভ্যন্তরের ক্যান্টিনের জন্য প্রতিমাসে ৪০ হাজার টাকা এবং বাইরের ক্যান্টিন থেকে ২০ হাজার টাকা করে জেল সুপারকে ঘুষ দিতে হয়েছে।
কারাগারের ডেপুটি জেলার মো: রাসেল তার অফিস কক্ষে টাকার বিনিময়ে হাজতিদের আত্মীয়স্বজনের সাথে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে দিতেন। এছাড়া তিনি বাড়তি টাকা গ্রহণ করে কারা অভ্যান্তরে নগদ টাকা ঢোকার ব্যবস্থা করেছেন। কারাগারের প্রধান কারারক্ষী দেলোয়ার হোসেন ও কারারক্ষী শরিফুল ইসলাম ৯ মাসের বাসা ভাড়া কর্তন না করে অর্থ আত্মসাৎ করেন। এমনকি বাগেরহাটের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পিযুষ চন্দ্র দে’র স্বাক্ষর জাল করে দুর্নীতির আশ্রয় নেয়া হয়েছে।
নির্বাহী বিভাগীয় তদন্তকারী কর্মকর্তা সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘ বাগেরহাটের জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটি জেলা কারাগারের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে নিবার্হী বিভাগীয় তদন্তের প্রতিবেদন প্রমাণিত হয়েছে। ওই প্রতিবেদন গত সপ্তাহের শেষে বাগেরহাটের জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটের কাছে দাখিল করা হয়েছে। বাগেরহাট কারাগারের সুপারসহ চার জনের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির সিডি ও প্রমানসহ ৪২ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন উল্লেখ করা হয়।
উল্লেখ্য, বাগেরহাট জেলা কারাগারের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনে শীর্ষ সংবাদ প্রকাশ হলে সরকারের উপর মহল থেকে বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে বাগেরহাট জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেয়। এরপর বাগেরহাটের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কারাগারের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে নিবার্হী বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করেন। এরপর নির্বাহী বিভাগীয় তদন্ত কমিটি সরেজমিনে দীর্ঘ তদন্ত শেষে দুর্নীতির প্রমাণ পান।
বিডি প্রতিদিন/৯ জুলাই ২০১৭/হিমেল