দেশে প্রথমবারের মতো বরিশাল-ভোলা মহাসড়কের প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বরিশাল ফুল সরণি নির্মাণ করা হচ্ছে। আগামী ১৫ জুলাই বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় মোড় (হিরন পয়েন্ট) থেকে চরকাউয়া জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ৪.৮ কিলোমিটার সড়কে কৃষ্ণচূড়া, সোনালু ও জারুল গাছের তিন হাজার চারা রোপনের মাধ্যমে এ সরণি বিনির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন।
গত মে মাসে জেলা উন্নয়ন ও সমন্বয় কমিটির সভায় সর্বসম্মতভাবে জনগণের স্বেচ্ছা অংশগ্রহণের মাধ্যমে ‘ফুল সরণি’ বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নব নির্মিত মহাসড়কের ওই অংশ পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসন ও সড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা।
এদিকে চারা ও আনুষাঙ্গিক ব্যয় বাবদ ফুল সরণি নির্মাণের জন্য দুই লাখ টাকা বরাদ্দ করেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে স্বেচ্ছায় এই কার্যক্রমে অংশগ্রহণের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এবং নগরীর তিনটি সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ, দুইটি ইউনিয়ন পরিষদসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ও প্রতিষ্ঠান। চারা রোপনের তিন বছরের মধ্যে মহাসড়কের ওই অংশে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে এক অপরূপ স্থান হয়ে উঠবে। বর্তমান ও আগামী প্রজন্ম এবং প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ফুল সরণির সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন বলে আশা উদ্যোক্তা বরিশালের জেলা প্রশাসক ড. গাজী মো. সাইফুজ্জামানের।
বরিশাল-ভোলা মহাসড়কের বিশ্ববিদ্যালয় মোড় থেকে দিনার জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ফুলেল সরণি নির্মাণের আহ্বান জানিয়ে জেলা প্রশাসন পরিচালিত ফেসবুক গ্রুপ ‘বরিশাল প্রোসপেক্ট অ্যান্ড প্রবলেম’ পেজে গত ১১ মে একটি পরিবেশ বান্ধব পোস্ট দিয়েছিলেন জাহিদ চয়ন নামে একজন নাগরিক।
ফেসবুকে প্রস্তাবটি সমর্থন করে অভিযানে অংশ নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন বহু সদস্য। এর পরিপ্রেক্ষিতে পরদিন ১২ মে জেলা প্রশাসকসহ প্রশাসন এবং সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ওই সড়ক পরিদর্শন করে ফুল সরণি নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই করেন। জেলা প্রশাসক সরেজমিন পরিদর্শন শেষে ফুল সরণি বিনির্মানে নাগরিকদের মতামত আহ্বান করেন। এতে ব্যাপক সাড়া মেলে।
এ অভিযান পরিচালনার জন্য বিভিন্ন কমিটি গঠন করা হয়। ইতিমধ্যে সাভার থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে কৃষ্ণচূড়া, সোনালু ও জারুল গাছের তিন হাজার চারা। বুধবার গাছের চারা রোপনের প্রাথমিক ধাপ গর্তকরণের কাজও শেষ হয়েছে। এর আগে ১১ জুলাই পর্যন্ত এই অভিযানে অংশগ্রহণে আগ্রহীদের রেজিস্ট্রেশন করা হয়। বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক সভাও করেন জেলা প্রশাসক।
অভিযান সফল করার জন্য জেলা প্রশাসক বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. এসএম ইমামুল হক, বিএম কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর স.ম ইনামুল হাকিম, সরকারি বরিশাল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর অলিউল ইসলাম এবং সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর সচীন কুমার রায়সহ জনপ্রতিনিধি এবং সমাজের গন্যমান্য ব্যক্তির্গের সাথে মতবিনিময় করেন।
এদিকে অভিযানের সার্বিক বিষয় তুলে ধরতে বুধবার সকাল ১১টায় জেলা প্রশাসনের সভা কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন জেলা প্রশাসক। তিনি জানান, আগামী ১৫ জুলাই বরিশাল-ভোলা মহাসড়কের বিশ্ববিদ্যালয় মোড় থেকে চরকাউয়া জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ৪.৮ কিলোমিটার সড়কের দুই পাশে তিন হাজার সৌন্দর্য বর্ধনকারী কৃষ্ণচূড়া, সোনালু ও জারুল গাছের চাপা রোপন করা হবে। ওইদিন সকাল ১০টায় অভিযান শুরু হয়ে দুপুর ১টা পর্যন্ত চলবে। এতে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, জনপ্রতিনিধি এবং স্থানীয় বাসিন্দাসহ প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ অংশ নেবে বলে প্রত্যাশা জেলা প্রশাসকের। বিশ্ববিদ্যালয় মোড়ে কর্মসূচির উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন বিভাগীয় কমিশনার মো. শহীদুজ্জামান।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ৪.৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি ১০০ মিটার করে ৪৮টি খণ্ডে ভাগ করে সেখানে চারা রোপনের জন্য ৪৮টি দল নির্বাচন করা হয়েছে। নান্দনিকতা ফুটিয়ে তুলতে পর্যায়ক্রমে একেক খন্ডে কৃষ্ণচূড়া, সোনালু এবং জারুল গাছের চারা রোপন করা হবে। একেক ধরনের চারা রোপনকারী দলের সদস্যদের কপালে বেঁধে মনোরম পরিবেশ সৃষ্টির জন্য তৈরি করা হয়েছে বেগুনি, সোনালি ও লাল ফিতা। অভিযানে অংশগ্রহণকারীদের উজ্জীবিত রাখতে এবং উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টির জন্য রাখা হচ্ছে একাধিক সাংস্কৃতিক ও বাদক দল। এছাড়া দেশের প্রথম স্বীকৃত ফুল সরণি বিনির্মাণ অভিযান সরাসরি জেলা প্রশাসনের ফেসবুক টিভিতে সম্প্রচার করার কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
চারা রোপনের তিন বছরের মধ্যে ফুল ফুটতে থাকবে। যা চলবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম। এর মাধ্যমে ওই সড়কটি একটি পর্যটন কেন্দ্র করা সম্ভব হবে বলে আশা জেলা প্রশাসক ড. গাজী মো. সাইফুজ্জামানের।
বিডি প্রতিদিন/১২ জুলাই, ২০১৭/ফারজানা