বন্যায় সিরাজগঞ্জের তাঁত শিল্পের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। সুতা, বিম, ত্যানা, নলি ও মোটরসহ সব পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। তাঁত প্রতি প্রায় ৩০ হাজার টাকার ক্ষতি হওয়ায় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক তাঁত মালিকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এছাড়া কাজ না থাকায় তাঁত শ্রমিকদের অবস্থাও এখন করুন। এ অবস্থায় ঘুরে দাঁড়াতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী সংস্থাগুলোর সহায়তা দাবি করেছেন তাঁতীরা।
জানা যায়, গত ১২ আগষ্ট থেকে যমুনার নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে থাকে। সাতদিনে যমুনার পানি বিগত ৩০ বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে বিপদসীমার ১৫২ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে। ভয়াবহ বন্যায় সিরাজগঞ্জ সদর, বেলকুচি ও শাহজাদপুরের প্রায় সকল গ্রাম তলিয়ে যায়। ফলে এসব এলাকার অধিকাংশ মানুষের উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন তাঁত কারখানাগুলো তলিয়ে যাওয়ায় তাঁতীরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে।
জেলার প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার তাঁতের কাপড়সহ তাঁতের প্রধান উপকরণ সুতা-মাকড়-ত্যানা-মোটর, নলি ও তাঁত নষ্ট হয়ে গেছে। অর্থের অভাবে মেরামত করতে না পারায় তারা হতাশ হয়ে পড়েছেন। ঈদের সামনে আয় রোজগার না থাকায় এসব তাঁতীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। শুধু তাঁত মালিক নয়-এর সাথে জড়িত কয়েক হাজার নারী-পুরুষ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়ায় তারাও অতিকষ্টে জীবনযাপন করছে।
সদর উপজেলার পূর্ব মোহনপুর ও বাঐতারা গ্রামের তাঁতী নুরুল ইসলাম ও কাওসারসহ অনেকে জানান, বন্যার পানি প্রবলবেগে বৃদ্ধি পাওয়ায় কোন কিছুই সরানো সম্ভব হয়নি। ফলে তাঁতের সাথে লাগানো কাপড়, সুতা, মোটর সবকিছু নষ্ট হয়ে গেছে। তাঁত প্রতি প্রায় ৩০ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে। দু'দিন পরেই ঈদ। ঘরে খাবার নেই। ঈদে সেমাই কিনব সেই টাকাই নাই। এ অবস্থায় সরকার সহায়তা না করলে আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারব না।
তারা অভিযোগ করে বলেন, একদিকে আয় রোজগার নেই। তার উপর বেসরকারী সংস্থাগুলো কিস্তির জন্য চাপ দিচ্ছে। নানা ধরনের ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে। সবমিলিয়ে আমরা দুর্বিসহ অবস্থায় জীবনযাপন করছি।
তাঁত শ্রমিকরা জানান, তাঁত নষ্ট হওয়ায় প্রায় একমাস যাবত কোন কাজকর্ম নেই। পরিবার পরিজন নিয়ে খেয়ে না খেয়ে জীবনযাপন করছি। ঈদে ছেলে-মেয়েদের মুখে সেমাই তুলে দিবে সে অর্থ আমাদের হাতে নেই।
জেলা প্রশাসক কামরুন নাহার সিদ্দিকা জানান, তাঁতীদের প্রাথমিকভাবে কিছু ত্রাণ সামগ্রী সহায়তা করা হয়েছে। তাঁতীরা যাতে নতুন উদ্যামে কাজ শুরু করতে পারে এ জন্য তাঁত বোর্ডের কাছে তাদের বেশী পরিমাণ ঋণ দেয়ার আবেদন করা হয়েছে। এছাড়াও বেসরকারী সংস্থাগুলোকেই ক্ষতিগ্রস্ত তাঁতীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আহবান করা হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/২৯ আগস্ট ২০১৭/হিমেল