দীর্ঘ এক বছরে চালু হয়নি রাঙামাটির বাঘাইছড়ির দুরছড়ি বাজার। সরকারসহ বা অন্য কোনো সংস্থা থেকে ক্ষতিপূর্ণ পায়নি ক্ষতিগ্রস্তরা। পুনর্বাসন হয়নি আগুনে বসতভিটে হারা পরিবারগুলো। দীর্ঘ দিন ধরে মানবাতর দিন কাটছে এসব পরিবার ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর নতুন করে চালু হয়নি বাজার। হাট না বসায় চরম দুর্ভোগে স্থানীয় পাহাড়ি ও বাঙালি ক্ষুদ্র-মাঝারি ব্যবসায়ীরা। একটা সময় পাহাড়ি-বাঙালি ব্যবসায়ীদের পদভারে যে এলাকা মুখরিত থাকতো, সে বাজার এখন বিরাণ।
স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে ২০ অক্টোবর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে উপজেলার খেদারমারা ইউনিয়নের দুরছড়ি বাজারে। আগুনে পুড়ে যায় ২৫০টি দোকান ও বাজারের আশপাশর কমপক্ষে ১০০টি পরিবারের বসতঘর। পুড়ে যায় খেদারমারা ইউপির কার্যালয় ও তথ্য সেবাকেন্দ্রও। সে সময় অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের তাৎক্ষণিকভাবে জেলা প্রশাসন ৩ মেট্রিক টন চাল ও জেলা পরিষদ ১ লাখ টাকা ও রেড ক্রিসেন্টের পর পক্ষ থেকে ১০০ জনকে দুই হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হয়। এ পর ক্ষতিগ্রস্তদের খবর রাখেনি কেউ।
বাজার কমিটির সভাপতি মো. আবুল খায়ের জানান, রহস্যজনকভাবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেও তাৎক্ষণিকভাবে কোন মামলা কিংবা তদন্ত কমিটি গঠনপূর্বক কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি । ক্ষতিগ্রস্তদের দাবির প্রেক্ষিতে প্রতিটি দোকানের জন্য ছয় লাখ ৩৬ টাকা ধার্য করে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে একটি প্রক্কলন পার্বত্য বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলেও তা থেকে যায় কাগজে কলমে।
এ বিষয়ে বাজার কমিটি তিন বার জেলা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। পরে চলতি বছরের ১৫ অক্টোবর বাজার কমিটির সভাপতির নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের সচিব নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরার যোগাযোগ করে। নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা বলেন, পার্বত্য বিষয়ক মন্ত্রী সরকারের সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। কিন্তু দেশে চলমান রোহিঙ্গা পরিস্থিতির জন্য মন্ত্রণালয়ের আর্থিক বিষয়ক প্রস্তাবকে নাকচ করা হয়েছে। তাই হতাশ হয়ে ফিরে আসে বাজার কমিটির প্রতিনিধি দলটি।
দুরছড়ি বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল সালাম জানান, ২০১৬ সালে ৩০ জুলাই তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দূরছড়ি বাজার বয়কট করার পর তিন মাসের মাথায় বাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা আসলে রহস্যজনক। কারণ ১৯৬০ সাল হতে দূরছড়ি বাজার রহস্যজনকভাবে তিন চার বার পুড়ে যায়। এ বিষয়ে তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু সে বিষয়ে কারো নজরদারি নেয়। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারি-বেসরকারিভাবে কোনো ক্ষতিপূরণও দেওয়া হয়নি। সম্প্রতি লংগদু অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের ইউএনডিপিসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। একই সাথে তাদের পূনর্বাসনও করা হচ্ছে। কিন্তু দুর্গম এ প্রত্যন্ত অঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত মানুষগুলোর খবর রাখেনি কেউ।
বিডি প্রতিদিন/১৯ অক্টোবর, ২০১৭/ফারজানা