পার্বত্যাঞ্চলে বিহারে বিহারে চলছে কঠিন চীবর দানোৎসব। এ উৎসবের মাধ্যমে বৌদ্ধ ভিক্ষুদেরকে ত্রি-চীবর নামে বিশেষ পোশাক দান করা হয়। মূলত প্রবারণা পূর্ণিমা পর থেকে শুরু হয়েছে মাসব্যাপী এ উৎসব। উৎসবকে ঘিরে পাহাড়ে বৌদ্ধ বিহারগুলো বিরাজ করছে সাজসাজ রব। পাহাড়ের বিভিন্ন বিহারে ধারাবাহিকভাবে এ উৎসব পালিত হবে।
বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের মতে, আড়াই হাজার বছর আগে মহামতি গৌতম বুদ্ধের জীবদ্দশায় তার প্রধান সেবিকা মহাপূণ্যবতী বিশাখা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তুলা থেকে সুতা কেটে রং করণ, বয়ন ও সেলাই শেষে চীবর (বিশেষ বস্ত্র) দানকার্য সম্পাদন করেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মহাদানযজ্ঞ সম্পাদন করার কারণে এ বৌদ্ধ ধর্মীয় উৎসবকে ‘দানোত্তম কঠিন চীবর দান’ বলা হয়।
এছাড়া ১৯৭৪ সালে বৌদ্ধ আর্যপুরুষ শ্রাবক বুদ্ধ মহাসাধক শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তের এক স্বর্গীয় অনুভূতি থেকে রাঙামাটি জেলার লংগদু উপজেলার তিনটিলা বৌদ্ধ বিহারে বিশাখার ঐতিহ্যবাহী নিয়মে এ ধর্মীয় অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এ পর থেকে পার্বত্যাঞ্চলের বিভিন্ন বিহারে এ চীবর দানোৎসব পালন করা হয়।
এ উপলক্ষে বুধবার রাঙামাটি যমচুগ বনাশ্রম ভাবনা কেন্দ্রে ৩৪তম কঠিন চীবর দানোৎসবে উদযাপিত হয়। যমচুগ বনাশ্রম ভাবনা কেন্দ্র মাঠে আয়োজিত প্রধান ধর্মালোচক ছিলেন বৌদ্ধরত্ন উপাধিপ্রাপ্ত শ্রীমৎ নন্দপাল মহাস্থবির। ধর্মদেশনা দেন যমচুগ বনাশ্রম ভাবনা কেন্দ্রের অধ্যক্ষ কল্যাণ জ্যোতি মহাস্থবির, লতিবাশ ছড়া বন বিহারের অধ্যক্ষ শুভবর্ধন মহাস্থবির প্রমুখ।
ধর্মদেশনা দেন যমচুগ বনাশ্রম ভাবনা কেন্দ্রের অধ্যক্ষ কল্যাণ জ্যোতি মহাস্থবির, লতিবাশ ছড়া বন বিহারের অধ্যক্ষ শুভবর্ধন মহাস্থবির প্রমুখ। এতে অংশ নেন রাঙামাটি আসনের সংসদ সদস্য উষাতন তালুকদার এমপি। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন স্থান থেকে শত শত নারী-পুরুষ পূর্ন্যাথী অংশ নেন। এর আগে সকালে পঞ্চশীল প্রার্থনা, বুদ্ধপূজা, অষ্টপরিস্কার দানসহ নানাবিধ অনুষ্ঠান করা হয়।
এছাড়া রাঙামাটি রাঙ্গাপানি মিলন বিহারে ৪৪তম দানোত্তম কঠিন চীবর দানোৎসবে প্রধান ধর্মালোচক ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পালিবিভাগের অধ্যাপক মহাযোগী জ্ঞান রত্ন মহাথের। এসময় পৌর পার্বত্য ভিক্ষু সংঘ প্রদ্ধালংকার মহাথের উপস্থিত ছিলেন। এতে পঞ্চশীল প্রার্থনা করেন, রাঙাপানি মিলন বিহার পরিচালনা কমিটির আর্ন্তজাতিক বিষয়ক সম্পাদক আনন্দ মিত্র চাকমা।
এদিকে কঠিন চীবর দানকে ঘিরে রাঙামাটি এখন উৎসবের নগরী। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের মধ্যে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের এ চীবর দানোৎসব বিহারে বিহারে ধর্মীয় কীর্তন, নাটক, চরকায় সুতা কাটা, বেইন বুনন, কল্পতরু শোভাযাত্রাসহ বর্ণাঢ্য নানা আয়োজন করা হয়েছে। উৎসবে বসছে বিভিন্ন মেলা। এ উৎসবে দূর-দূরান্ত থেকে ছুঠে আসছে হাজার হাজার নারী পুরুষ। সমাগম ঘটেছে লাখো মানুষের। মাসব্যাপী চলা এ উৎসব রাঙামাটি রাজ বন বিহারে প্রয়াত ধর্মীয় গুরু বনভন্তের স্মৃতির উদ্দেশ্যে চীবর উৎসর্গের পর শেষ করা হবে চীবর দানোৎসব।
বিডি-প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন