বগুড়া জেলাজুড়ে নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের উৎসব চলছে। অবাধে, প্রতিদিন শতশত ট্রাকে করে এই বালু পরিবহন করা হচ্ছে বিভিন্ন স্থানে।
জেলার যমুনা, বাঙালি, করতোয়া, ইছামতি, নাগর, সুখদহসহ বিভিন্ন বিল ও দিঘি থেকে অবাধে বালু উত্তোলনে নদী এলাকার আবাদি জমি দেবে গিয়ে ভূমিধসের আশংকা দেখা দিয়েছে। বালু উত্তোলনের নিয়ন্ত্রণ নিতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। মাঝে দুই একবার প্রশাসন থেকে বালু উত্তোলন রোধে অভিযান পরিচালনা করলেও নতুন করে আবার বালু উত্তোলন শুরু হয়েছে।
জানা যায়, বগুড়া শহরের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া করতোয়া নদীকে ঘিরে বগুড়া মোকামতলা থেকে বনানী পর্যন্ত ৯০ টি পয়েন্টে অবাধে বালু উত্তোলন চলছে। এরমধ্যে বগুড়া শহরের ফুলবড়ি, মাটিডালি, নওদাপাড়া, ঠেঙ্গামারা, বারপুর, মালতীনগর, বনানী, মানিকচক, শাজাহানপুর পয়েন্টে বালু ব্যবসায়িরা ব্যপরোয়া হয়ে বালু উত্তোলন অব্যাহত রখেছে। স্থান থেকে শ্যালোমেশিন দিয়ে বালু উত্তোল করা হচ্ছে। অবাধে বালু উত্তোলনের ফলে নদী এলাকার আবাদী জমি দেবে যেতে শুরু করেছে। শেরপুর উপজেলার গাড়ীদহ থেকে বথুয়াবাড়ী ব্রীজ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি স্থানে ভূমি ও বালু দস্যুরা প্রভাব খাটিয়ে বালু উত্তোলন করছে। এসব পয়েন্ট থেকে দিনে ও রাতে শতাধিক শ্রমিককে কাজে লাগিয়ে ট্রাকে ট্রাকে বালু উত্তোলন করছে ভূমি দস্যূরা। গাড়িদহ এলাকায় ভুট্টা ও ধানের ক্ষেতের ফসল নষ্ট করে বালু তোলা হচ্ছে।
ওই এলাকার কৃষকরা জানান, আবাদী জমির ধার ঘেঁষে বালু তোলার কারণে বর্ষার সময় ফসলী জমি ভেঙ্গে যায়। বালু তোলার ফলে দিন দিন আবাদী জমি গ্রাস করে ফেলছে নদী। করতোয়া নদীর উপর দিয়ে নির্মিত ব্রীজও হুমকীর মুখে রয়েছে। বগুড়ার ধুনট উপজেলার নিমগাছি ইউনিয়নের মাঝ দিয়ে বাঙালি নদী বহমান। নদীর উত্তর সীমানার পূর্ব তীর ঘেঁষে ধামাচাপা ও জয়শিং গ্রামের অবস্থান। প্রায় দেড় হাজারের মত পরিবার বসবাস করে গ্রাম দু’টিতে। পাশাপাশি ফসলি জমি, স্কুল, কলেজ মাদ্রাসা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো রয়েছে সেখানে। এই এলাকা থেকে বালু উত্তোলন চলছে অবাধে। প্রত্যেক বছর দফায় দফায় গ্রাম দু’টি ভাঙনের শিকার হয়। কালের আবর্তে ভাঙ্গণের কবলে পড়ে দু’টি গ্রামের অসংখ্য বসতভিটা ও ফসলি জমি বাঙালির পেটে চলে গেছে। বাস্তুভিটা হারা হয়ে অনেক পরিবার অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে কালীতলা গ্রোয়েন বাঁধের নিকট যমুনা নদীর জেগে ওঠা চর কেঁটে সাবার করে দিচ্ছে এক শ্রেণীর অসাধু চক্র। ফলে বর্ষাকালে শত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত্ত গ্রোয়েন বাঁধটি নদী ভাঙ্গণের হুমকির মুখে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। যমুনা নদীর বুকের কাছে সারিয়াকান্দি পৌর শহর সহ বহু সরকারী বেসরকারী স্থাপনা যমুনা নদী ভাঙ্গনের হুমকির মুখে পড়ায় গত ২০০০ সালে শত কোটি টাকা ব্যয়ে কালিতলায় গ্রোয়েন বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এতে করে যমুনা নদীর গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় সারিয়াকান্দি পৌর শহর সহ বহু সরকারী বেসরকারী স্থাপনা গুলো যমুনা নদীর ভাঙ্গণ থেকে রক্ষা পায়। গ্রোয়েন নির্মাণের পর যমুনা নদীর ডান তীরে চর জেগে উঠতে শুরু করে। একটি অসাধু চক্র জেগে উঠা ওই চর থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলণ করছে। ফলে গ্রোয়েন বাঁধের অতি নিকটে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে। এসব গর্তের ফলে বর্ষাকালে যমুনা নদীর ডান তীরে ভাঙ্গণের আশংকা দেখা দিয়েছে। খবর পেয়ে প্রশাসন থেকে বালু উত্তোলন রোধে পদক্ষেপ নেয়। বালু উত্তোলন বন্ধ হলেও আবারো বালু উত্তেলনের প্রস্তুতি নিয়েছে।
সম্প্রতি বগুড়া জেলা প্রশাসন থেকে কয়েকদফা অভিযান চালিয়ে বালু উত্তোলন রোধ করে। এসময় শ্যালোমেশিন জব্দ করে আগুনে পুড়িয়ে দেয় এবং বালু শ্রমিকদের জেল জরিমানা করে। এরপর আবারো শুরু করেছে বালু ব্যবসায়ীরা। কোথাও কোথাও রাতের বেলা মেশিন বসিয়ে নদীতে বিপুল পরিমানে বালু উত্তোলন করে সকালের মধ্যে সরবরাহ করছে। বালু উত্তোলনের কিছু ঘটনা সাধারণ মানুষের আড়ালেই থাকছে। অথচ বগুড়ায় সরকারিভাবে বালু মহাল রয়েছে জেলার ধুনট উপজেলার বিলচাপড়ী, বেড়েরবাড়ি, বথুয়াবাড়ি, শেরপুর উপজেলার জোড়গাছা ও ঘাসুড়িয়াতে। এই ৫টি স্থান থেকে বালু উত্তোলনের অনুমতি থাকলেও বগুড়ার এক শ্রেনীর অসাধু চক্র বালু উত্তোলন করছে উৎসব আকারে। সম্প্রতি বগুড়া শহরের ফুলবাড়ি ও সাবগ্রাম এলাকায় বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে কয়েকটি সন্ত্রাসী ঘটনাও ঘটেছে।
বগুড়া জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আমিরুল ইসলাম জানান, বগুড়া জেলায় ৫টি বালু মহাল রয়েছে। বালুমহালগুলো নিয়মতান্ত্রিকভাবে ইজারা প্রদান করা হয়েছে। এর বাহিরে বালু উত্তোলনের কোন সুযোগ নেই। এধরনের সংবাদ পাওয়া মাত্রই আমরা অভিযান পরিচালনা করেছি। অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন