ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী শূন্য হচ্ছে রাঙামাটির জেলা আওয়ামী লীগ। জেলা ও উপজেলাগুলোতে হিড়িক পড়েছে পদত্যাগের। ইতিমধ্যে জুরাছড়ি উপজেলাতে দলত্যাগ করেছে ৩১৯ নেতাকর্মী। তাই জুরাছড়িতে আওয়ামী লীগের উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড শাখা এখন বিলুপ্তপ্রায়। এছাড়া বাঘাইছড়ি উপজেলায় দলত্যাগ করেছেন আওয়ামী লীগের চার নেতাকর্মী। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত রাঙামাটি জেলায় দলটির ২২৩ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী নেতাকর্মী পদত্যাগ করলেন।
এছাড়া রাঙামাটির বরকল, বিলাইছড়ি, জুরাছড়ি, বন্দুক ভাঙ্গা, রাজস্থলী, বাঘাইছড়ি ও রাঙামাটি সদর উপজেলায় উল্লেখযোগ্যহারে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নেতাকর্মীরা পদত্যাগ করেছে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি। দলত্যাগে আরও বিভিন্ন উপজেলায় প্রস্তুতি চলছে বলেও খবর পাওয়া গেছে। এতে হতাশ হয়ে পড়ছেন রাঙামাটির আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। তবে এ পর্যন্ত সর্বমোট কতসংখ্যাক নেতাকর্মী দল পদত্যাগ করেছে সে বিষয়টি স্বীকার করতে নারাজ জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা।
তবে এ ব্যাপারে রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মুছা মাতব্বর জানান, গত ৫ ডিসেম্বর জুরাছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অরবিন্দু চাকমাকে গুলি করে হত্যা, বিলাইছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রাসেল মারমাকে প্রাণনাশের উদ্দেশ্যে শারীরিক নির্যাতন এবং ৬ ডিসেম্বর রাঙামাটি জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ঝরনা খীসাকে কুপিয়ে মারাত্মক আহত করার ঘটনায় কয়েক দিনের ব্যবধানে দলত্যাগ করেছেন আওয়ামী লীগের বহু ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নেতাকর্মী। অবৈধ অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করতে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী নেতাকর্মীদের পদত্যাগে বাধ্য করছে অস্ত্রধারী আঞ্চলিক সংগঠনগুলো। এ ধরনের চাপে যদি কোনো নেতাকর্মীকে পদত্যাগে বাধ্য করানো হয়, তাহলে রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগ তা গ্রহণ করবে না। হত্যার ভয় আর পদত্যাগে বাধ্য করে এখানে আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করা যাবে না।
অন্যদিকে আসন্ন সংসদ নির্বাচনে রাঙামাটি আসনটি জেলা আওয়ামী লীগ ধরে রাখতে পারবে কিনা তা নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন দলের শীর্ষ নেতারাও। কারণ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে পাহাড়ের রাজনীতিতে ঘটেছিল নতুন মেরুকরণ। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী ঊষাতন তালুকদারের কাছে বিপুল ভোটে ধরাশায়ী হলেন হেভিওয়েট প্রার্থী ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য দীপংকর তালুকদার। নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর নড়েচড়ে বসেছে রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগ।
দু’দু’বার হোঁচট খেয়েছেন সাবেক এমপি ও প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার। তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে সংসদের ২৯৯-পার্বত্য রাঙামাটি আসন থেকে ১৯৯১, ১৯৯৬ ও সর্বশেষ ২০০৮ সালে তিন দফায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। অর্থাৎ এ পর্যন্ত পাঁচ দফায় নির্বাচন করে হেরেছেন দু’বার। তবে এখন আর বসে নেই জেলা আওয়ামী লীগ। অতীতের শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা নিয়ে নেতারা এখন দল গোছাতে ব্যস্ত হয়ে উঠলেও, অন্যদিকে দল ছাড়ছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নেতাকর্মীরা। দলীয় নেতাকর্মীদের পদত্যাগের হিড়িকে হঠাৎ সাংগঠনিক সংকটে পড়েছে রাঙামাটি আওয়ামী লীগ। দলটিতে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী নেতাকর্মী শূন্য হয়ে পড়েছে কয়েকটি উপজেলা।
পদত্যাগকারীরা বলেন, ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সমস্যার কারণে দলীয় সব কার্যক্রম থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিচ্ছেন তারা। এরই মধ্যে তারা দলের গঠনতন্ত্র অনুসারে নিজ নিজ সংগঠনের সভাপতিকে নিজেদের পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন। জুরাছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রবর্তক চাকমা পদত্যাগপত্র হাতে পেয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন।
এব্যাপারে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ও রাঙামাটি জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফিরোজা বেগম চিনু বলেন, অবৈধ অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে দল থেকে পদত্যাগ করার জন্য বাধ্য করছে ঠিকই। তবে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয় কেড়ে নিতে পারবে না।
অন্যদিকে রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগ থেকে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী উল্লেখযোগ্য নেতাকর্মী পদত্যাগ পত্র জমা দিলেও তাদের বিষয়ে এখনো কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি সংগঠনটি। তাই কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীরা রাঙামাটিতে আগামী বর্ধিত সভায় যোগ দিবেন, সে সময় সব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বলে জানান দলটির সাধারণ সম্পাদক মো. মুছা মাতব্বর।
বিডি প্রতিদিন/২৬ ডিসেম্বর ২০১৭/হিমেল