ভিক্ষাবৃত্তি করেই যে ছেলের পড়া লেখার খরচ চালিয়েছেন মা, সেই ছেলে চাকরি পেয়েও মায়ের ভাগ্য বদলায়নি। সেই মা রয়ে গেছেন ভিখারীনিই। ৫ ছেলে ও ১ মেয়ের মধ্যে অন্য ছেলেরা করেন কৃষিকাজ। তারা কেউই বৃদ্ধ মাকে দেখাশুনা করেন না। ভিক্ষা করেই জীবন যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন মা। ঘটনাটি ঘটেছে নাটোরের বাগাতিপাড়ার ফাগুয়াড় দিয়াড় ইউনিয়নের সান্ন্যালপাড়া গ্রামে। ভিখারীনি ওই মায়ের নাম নসরান বেওয়া (৬০)।
মালঞ্চি বাজারে ভিক্ষা করার সময় মা নসরান বেওয়া সাংবাদিকদের বলেন, তার ছেলে ও ছেলের বউ তাকে কোন ভাত কাপড় দেয় না, স্বামীর মৃৃত্যুর পর তিনি ছেলেদের ভিক্ষা বৃত্তি করে পড়া লেখা করিয়েছেন। এর মধ্যে রফিকুল ইসলাম নামের এক ছেলে কমিউনিটি ক্লিনিকে চাকরি করেন। আর সেই ছেলের বউ ফাগুয়াড়দিয়াড় ইউনিয়নের ইউপি সদস্যা। বড় আশা ছিল ছেলে লেখাপড়া শেষ করে চাকরি করে মাকে দেখাশুনা করবে, কিন্তু সে আশা ধুলিসাৎ হয়ে এখন ভিক্ষা করে সংসার চালাতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, কোন মতে জীবন চলছে। বয়স্ক ভাতায় যে কয়টা টাকা পান তা দিয়ে চিকিৎসা আর পেটে খাওয়া হয় না। মানুষের কাছ থেকে হাত পেতে চেয়ে নিতে হয় টাকা, আর ওই টাকা দিয়েই কোন মতে চলে সংসার।
রবিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চাকরিজীবী ছেলের মায়ের ভিক্ষাবৃত্তির করুন কাহিনীর খবর ভাইরাল হলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ খবর প্রকাশ পায়। এ ঘটনায় এলকাজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনের নজরে এলে আজ দুপুরে নসরনের বাড়িতে ছুটে যান উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নাসরিন বানু। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা হাবিবা খাতুন, সমাজসেবা অফিসার রেজাউল ইসলাম, ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ জহুরুল ইসলাম প্রমুখ।
সেসময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্থানীয়দের মুখে সব ঘটনা শুনেন এবং নসরনের ভরন পোষণের ব্যবস্থা করেন। চাকরিজীবী ছেলে রফিকুল ইসলামকে মায়ের সব ধরনের সেবা শশ্রুষার দায়িত্ব দেন। একই সাথে মায়ের খরচের জন্য প্রতিমাসে রফিকুলের নিকট থেকে ১ হাজার ও অন্য ছেলেদের নিকট থেকে ৫শ’ টাকা করে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে মাকে দেওয়ার নির্দেশ দেন ইউএনও। এজন্য একজন গ্রাম পুলিশকেও নিয়মিত মনিটরিংয়ের জন্যে ট্যাগ করে দেন ইউএনও।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরিন বানু বলেন, ঘটনাটি খুবই অমানবিক। ভিক্ষাবৃত্তি থেকে বৃদ্ধ ওই মাকে মুক্তি দিতে তার ছেলেদের নিকট থেকে মাসিক খরচের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও চাকরিজীবী ছেলে রফিকুল ইসলামের নিকট থেকে একটি লিখিত অঙ্গীকার নামা নেওয়া হয়েছে।
এব্যাপারে তার ছেলে রফিকুল ইসলাম বলেন, মাকে আমরাই দেখা শুনা করি। কিন্তু মাঝে মধ্যে কথা না শুনে বাইরে গিয়ে মানুষের নিকট হাত পাতেন। মায়ের এই হাত পেতে অন্যের টাকা নেওয়া আমরা পছন্দ করি না। আবার কিছু করতেও পারি না।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার