বগুড়ার গাবতলী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলায় উঠা একটি বাঘাইড় মাছ বিক্রি হলো ১ লাখ টাকায়। বুধবার পোড়াদহ মেলা প্রাঙ্গণে ৮২ কেজির বাঘাইড় মাছটি কেটে বিক্রি করা হয়। ১৫০০ টাকা কেজি দরে মাছটি বিক্রি করা হয় ক্রেতাদের মাঝে। এ ছাড়া এ মেলায় ১৬ কেজি ওজনের বোয়াল মাছের দাম ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে।
বিশাল আকৃতির মাছ, কাঠের আসবাবপত্র, গৃহস্থালি দ্রব্য আর বড় বড় মিষ্টি কেনাবেচার মধ্য দিয়ে শেষ হলো ঐতিহ্যবাহী মেলা।
জানা যায়, প্রায় ২০০ বছর আগে থেকে সন্ন্যাসী পূজা উপলক্ষে জেলার গাবতলী উপজেলার গোলাবাড়ী বন্দরের পূর্বধারে গাড়ীদহ নদীর পশ্চিমপার্শ্বে মেলাটি অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তবে এবার মেলার স্থান পরিবর্তন হয়ে পূর্ব-উত্তর পাশে বসেছে।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যাম আমিনুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে এবার মেলা বসে। পোড়াদহ নামক স্থানে হয় বলে এ মেলার নাম পোড়াদহ মেলা। মেলাকে ঘিরে আশপাশে প্রায় ৩০ গ্রামের লোকজন মেয়ে-জামাইকে নিমন্ত্রণ দিয়ে আপ্যায়ন করে থাকে। এ কারণে স্থানীয়রা আবার এ মেলাকে জামাই মেয়ে মেলা বলে থাকে।
পোড়াদহ মেলাটিকে ঘিরে জেলার গাবতলী, শাজাহানপুর, সোনাতলা, সারিয়াকান্দি, শাজাহানপুর, ধুনট ও বগুড়া সদরে এ মেলার ব্যাপক আমেজ থাকে। যে কারণে মেলার দিন শহরে বেশ ফাঁকা দেখা যায়। পাশ্ববর্তী ৭টি উপজেলাসহ আশেপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয় এ মেলা।
মিষ্টি, আর মাছের জন্য বিখ্যাত ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলা। এবার ৮২ কেজি ওজনের বাঘাইড় মাছ ছাড়াও ১৫ কেজি ওজনের কাতলা, ১২ কেজি ওজনের সিলভার কার্প, আইড় ১৫ কেজি, বোয়াল মাছ ১৬ কেজি, ২০ কেজি, ২৫ কেজি ওজনের গাঙ্গ চিতল'সহ নানা নামের নানা ধরনের মাছে ভরে ছিল পোড়াদহ মেলা প্রাঙ্গণ।
মাছের পাশাপাশি মিষ্টি ও আসবাবাপত্রের মেলাও বসে জমজমাট হিসেবে। দুইশত বছরের এ মেলাকে ঘিরে প্রায় ৩০ গ্রামের মেয়ে ও মেয়ে জামাইদের করানো হয় বড় মাছ ও মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন। প্রায় কোটি কোটি টাকার কেনাবেচা হয়ে থাকে মেলায়। প্রতি বছরের মাঘ মাসের শেষ বুধবার আয়োজিত এই মেলা কালের বিবর্তনে হয়ে ওঠে পূর্ব বগুড়াবাসীর মিলনমেলা। মেলায় মাছ, মিষ্টি, আসবাবপত্র, বড়ই, পান-সুপারি, তৈজস পত্র, খেলনা থাকলেও কালক্রমে মাছের জন্য বিখ্যাত হয়ে আসছে। মেলায় নাগরদোলা, চরকি, সার্কাসসহ শিশুদের জন্য অন্যান্য খেলা থাকলেও বড় মাছ কিনে তা দিয়ে মেয়ে ও মেয়ে জামাইকে আপ্যায়ন করানো হয়ে থাকে।
মেলার জন্য ৭ কেজি ওজনের মাছ আকৃতির মিষ্টি তৈরি করেছেন ব্যবসায়ী মো. নতুন। এ মিষ্টির দাম হাঁকানো হয়েছে ৩ হাজার টাকা। এছাড়া এক কেজি, দুই কেজি, ৩ কেজি, ৪ কেজি ওজনের মিষ্টিও মেলায় পাওয়া যাচ্ছে প্রায় সব দোকানে। এসব মিষ্টির আবার বিচিত্র নামকরণ করা হয়েছে।
মেলার মাছ বিক্রেতা ব্যবসায়ি আলম হোসেন, ১৬ কেজি ওজনের বোয়াল মাছের দাম হাঁকান ২৫ হাজার টাকা। বোয়াল মাছটি দেখতে সাধারণ মানুষের ভিড় ছিল প্রচুর। দুপুরে মাছটি ৮০০ টাকা কেজি দরে কেটে বিক্রি করেন।
এবারের মেলায় সবচেয়ে বড় মাছ এনেছেন সিরাজগঞ্জ থেকে আব্দুস সামাদ। তিনি এনেছেন ৮২ কেজি ওজনের বাঘাইড় মাছ। যমুনা নদী থেকে মাছটি ধরেন কয়েক দিন আগে। তবে পুরো মাছ কেউ ক্রয় না করায় দুপুর ১২টার দিকে মাছটি কেটে প্রতি কেজি বিক্রি করা হয় ১৫০০ টাকা কেজি দরে।
মাছের ব্যবসায়ী গাবতলী উপজেলার আব্দুর রহমান, আলম হোসেন, সাহেব আলী, ভোলা, বিশাল আকৃতির মাছ মেলায় নিয়ে এসেছেন। এই মেলায় ১২ থেকে ১৫ কেজি ওজনের বোয়াল মাছের দাম হাঁকানো হয়েছে প্রতি কেজি ১৬শ টাকা, ১২ থেকে ১৫ কেজি ওজনের কাতলা মাছ ১৫’শ টাকা কেজি, ৬ থেকে ৮ কেজি ওজনের কাতলা মাছ ১২’শ টাকা, ৮ থেকে ১২ কেজি ওজনের চিতল ৮শ' টাকা প্রতি কেজি, ১০ কেজির উপরে আইড় মাছ ১২’শ থেকে ১৫’শ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া রুই, পাঙ্গাস, ব্রিগেড অন্যান্য জাতের মাছ উঠেছে মেলায়।
মেলায় মাছ ক্রয় করতে আসা বগুড়ার গাবতলী উপজেলার নাড়ুয়ামালা এলাকার হয়রত আলী জানান, তিনি মাছ কিনে শ্বশুরবাড়ি যাবেন। তিনি শুধু বড়বড় মাছ দেখছেন। এপাশ ওপাশ ঘুরে ৬ কেজি ওজনের কাতল মাছ কিনেছেন সাড়ে ৬ হাজার টাকায়। মেলায় অনেক ভিড় খুব বেশি কথা বলা যাচ্ছে না মাছ ব্যবসায়িদের সাথে।
মেলাকে ঘিরেই শুধু মাছ বিক্রি হচ্ছে না। এই মেলার দিনে বগুড়া শহরের ফতেহ আলী ও চাষী বাজারেও বড় আকৃতির মাছ নিয়ে আসা হয়। মাছের দোকানগুলো বিভিন্ন রঙের কাগজ দিয়ে সাজানো হয়।
গাবতলী উপজেলার সমাজসেবক লুৎফর রহমান সরকার স্বপন জানান, হাজার হাজার মানুষের পদচারণা ছিল মেলায়। জামাই-মেয়েসহ আত্মীয় স্বজনদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে গোটা এলাকা। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সার্বিক নিরাপত্তা ছিল চোখে পড়ার মতো। এ মেলায় আশপাশের কয়েকটি উপজেলার মানুষ ভিড় করে। লাখ লাখ মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে মেলা প্রাঙ্গণ।
বগুড়ার গাবতলী মডেল থানার ওসি সেলিম হোসেন জানান, পোড়াদহ মেলাটি সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিভিন্ন উপজেলার পাশাপাশি জেলা থেকেও সাধারণ মানুষ মেলায় এসেছেন। পুলিশ সতর্ক প্রহরায় রয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা