কক্সবাজার জেলার শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ীদের আত্মসমর্পণের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী শনিবার টেকনাফ মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এ আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠিত হবে।
টেকনাফে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানকে ঘিরে বুধবার সকাল থেকে টেকনাফ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং এর মাধ্যমে জোর প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে। সভাস্থল টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বড় আয়োজনে তৈরি করা হচ্ছে অনুষ্ঠানস্থলের সাজসজ্জ্বা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশ প্রধানের টেকনাফ আগমনে স্থানীয়দের মাঝেও দেখা দিয়েছে স্বস্তি।
বাংলাদেশ পুলিশের উদ্যোগে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, সংসদ সদস্যরা , জনপ্রতিনিধি, গণমাধ্যম কর্মী ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দরা।
এদিকে চলমান মাদক বিরোধী অভিযানের মাঝে সরকার মাদক ব্যবসায়ীদের আত্মসমর্পণ করে সুষ্ঠু জীবনে ফিরিয়ে আসার সুযোগ সৃষ্টি করে দিলে প্রায় দেড় শতাধিক ইয়াবা ব্যবসায়ী আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছেন। সরকারের পক্ষ থেকে আত্মসমর্পণের জন্য গ্রীন সিগন্যাল পেয়ে তালিকাভুক্ত ও চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ীরা আত্মসমর্পণের জন্য কক্সবাজারের বিশেষ একটি স্থানে নিজ উদ্যোগে নিরাপদ হেফাজতে জড়ো হয়েছেন। এছাড়া আরও অনেকেই পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগাযোগ করছেন। আত্মসমর্পণকারীরা স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সুযোগ পাবেন।
তবে আত্মসমর্পণের জন্য সেফহোমে কতজন এসেছেন এবং কী কী শর্তে তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সুযোগ দেওয়া হবে তা প্রকাশ করতে রাজি হননি তিনি।
জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) এবিএম মাসুদ হোসেন বলেন, আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শুক্রবার কক্সবাজারে পৌঁছাবেন।
বর্তমানে মাদক ইয়াবা যুব সমাজকে গ্রাস করছে। এই ইয়াবা আসে মূলত মিয়ানমার থেকে। ইয়াবা পাচার বন্ধে মিয়ানমারের সহায়তা চেয়েও পাওয়া যাচ্ছে না কোনো প্রতিকার। গত বছরের ৪ মে থেকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মাদকবিরোধী অভিযানে নামে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এসব অভিযানে কয়েকশ জন নিহত হলেও ইয়াবা কারবার বন্ধ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রশাসনকে।
ইতোমধ্যে চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ীর একটি অংশ স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পুলিশের সাথে যোগাযোগ করে আত্মসমর্পণের আগ্রহ জানালে বিষয়টি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে লিখিতভাবে জানালে এ নিয়ে বৈঠক করা হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরসূচি তুলে ধরে পুলিশ সুপার মাসুদ বলেন, ১৫ ফেব্রুয়ারি সকালে বিমানে কক্সবাজার পৌঁছাবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ওইদিন বিকালে কক্সবাজারে জেলার ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। পরদিন সকালে তিনি টেকনাফে আত্মসমর্পন অনুষ্ঠানে যাবেন।
আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আগমনের সার্বিক প্রস্তুতির তদারকিতে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী আগামীকাল বৃহস্পতিবার কক্সবাজার আসছেন বলেও জানান এসপি মাসুদ।
তিনি আরো বলেন, গত বছরের শেষের দিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করা সর্বশেষ তালিকায় ইয়াবা পাচারকারী হিসেবে চিহ্নিত ১ হাজার ১৫১ জন কক্সবাজারের। তাদের মধ্যে শীর্ষ ইয়াবা কারবারি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ৭৩ জনকে।
শীর্ষ ইয়াবা চোরাকারবারিসহ তালিকায় থাকাদের বড় একটা অংশের বসবাস সীমান্তবর্তী টেকনাফ উপজেলায়। তাদের সবাই কমবেশি প্রভাবশালী, কেউ কেউ আবার জনপ্রতিনিধিও। ইয়াবা ব্যবসায়ীদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয় সাবেক সাংসদ আব্দুর রহমান বদিও।
এর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, ইয়াবা ব্যবসায়ীরা স্বাভাবিক জীবনে না এলে মামলা চলবে। আর স্বাভাবিক জীবনে এলে এদের মামলা আমরা দেখব। ইয়াবা পাচার করে বিপুল অর্থের মালিক হওয়া ব্যক্তিরা আত্মসমর্পণ করলে তাদের অবৈধ সম্পদ বৈধতা পাবে কি না- সে প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না দিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘সম্পদের বিষয়টি দুদক বা এনবিআর খতিয়ে দেখবে।’
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন