ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে একটি রাইস মিলের বিষাক্ত বর্জ্য ফেলা হচ্ছে বারাসিয়া নদীতে। দিনের পর দিন বর্জ্য ফেলার কারণে নদীর পানি দূষিত হয়ে পড়েছে। ফলে নদীর পানিতে গোসল করাসহ এ পানি ব্যবহার করতে পারছে না কেউই। তাছাড়া নদীতে বিষাক্ত বর্জ্য ফেলার কারণে পরিবেশ হুমকির মুখে পড়েছে। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার মিল কতৃপক্ষকে বলা হলেও নদী তীরের মানুষের কোন কথাই তোয়াক্কা করছে না তারা। দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।
স্থানীয় এলাকাবাসী অভিযোগ, বোয়ালমারীর মাঝকান্দি-ভাটিয়াপাড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে সোতাশি গ্রামে এ রাইস মিলটি অবস্থিত। মিল থেকে মোটা পাইপের মাধ্যমে সরাসরি নদীতে ফেলা হচ্ছে পচা, দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা পানি ও আবর্জনা। ফলে নদীর স্বাভাবিক পানির রং পাল্টে গেছে। পানিতে ফেলা ময়লা আবর্জনার পচা দুগন্ধে নদীর তীরে থাকাই কষ্টকর।
স্থানীয়রা জানান, নদীর দুইপাড়ের হাজারো মানুষের নিত্য ব্যবহার্য পানির একমাত্র উৎস এই বারাসিয়া নদী। নদীর দুইপাড়ের সোতাসি চরপাড়া ও বান্দু গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের রান্না, কৃষিকাজ, গোসলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার করতো এ নদীর পানি। কিন্তু মিলটির ধান সিদ্ধ পচা দুর্গন্ধযুক্ত পানি নদীতে ফেলার কারণে পানি দূষিত হয়ে পড়েছে। নদীর পানি ব্যবহার করে অনেকেই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছে।
বর্তমানে এ নদীর পানি আর কেউই ব্যবহার করতে পারছেন না। নদীর পানি দূষিত হয়ে মরে যাচ্ছে নদীতে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। ফলে নদী থেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতে থাকা কয়েকশ' জেলে মাছ ধরতে না পেরে অসহায় অবস্থায় দিন কাটাতে বাধ্য হচ্ছে।
জানা গেছে, প্রতিদিন দুই হাজার চারশত মন ধান থেকে চাল উৎপাদনের সক্ষম এ মিলটিতে বর্জ্য পরিশোধনের কোন যন্ত্র নেই, নেই পরিশোধন প্লান্ট ইটিপি।
সোতাসি গ্রামের জাহাগীর বিশ্বাস, শাহজাহান বিশ্বাস, কৃষক ছমির শেখ জানান, মিলটি থেকে প্রতিনিয়ত দূষিত পানি নদীতে পড়ায় নদীর পানি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এটি দেখারও কেউ নেই। মিল মালিককে বারবার বিষয়টি বলা হলে তিনি এ বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। তারা জানান, কেউ বিষয়টি নিয়ে কথা বললে মিলের কর্মচারীদের দিয়ে হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। মিল মালিক প্রভাবশালী হওয়ায় কোন কিছুরই তোয়াক্কা তিনি করছেন না।
ময়না ইউপি চেয়ারম্যান নাসির মো. সেলিম বলেন, এলাকার সাধারণ মানুষ এই নদীর পানি দিয়ে তাদের প্রয়োজনীতা মিটিয়ে থাকে। কিন্তু মিলটির দূষিত বর্জ্যের কারণে এখন আর নদীর পানি ব্যবহারের উপযোগী নেই।
এ বিষয়ে বিকাশ এগ্রো ফুড এর স্বত্তাধিকারী বিকাশ চন্দ্র সাহা জানান, রাইস মিল থেকে কোন বর্জ্য তৈরি হয় না। নদীতে শুধুমাত্র পানি ফেলা হচ্ছে। সেই পানি ফেলায় নদীর পানির কোন ক্ষতি হয় না।
নদীতে বর্জ্য ফেলার বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। ঘটনা সত্য হলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল