কক্সবাজারের টেকনাফ শালবাগান ক্যাম্পে প্রত্যাবাসন তালিকায় নাম থাকা রোহিঙ্গাদের আবারও মতামত গ্রহণ শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার সাক্ষাৎকার দিয়েছে তালিকায় নাম থাকা ৩৩ পরিবার।
১৩ দিন বন্ধ থাকার পর বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত শালবাগান ২৬ নম্বর রোহিঙ্গা শিবিরে সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়।
এ দিন প্রত্যাবাসন তালিকায় নাম থাকা ৩৩ রোহিঙ্গা পরিবার জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) এবং বাংলাদেশের শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের (আরআরআরসি) প্রতিনিধিদের কাছে তাদের মতামত জানিয়েছে।
এ সব তথ্য নিশ্চিত করে শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের প্রতিনিধি, জাদিমোড়া ও শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ইনচার্জ মোহাম্মদ খালিদ হোসেন বলেন, প্রত্যাবাসনের তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গারা ফের মতামত জানিয়েছেন। তাদের মতামত একটি ফরমে লিপিবদ্ধ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে। প্রত্যাবাসনের তালিকায় নাম থাকা সব রোহিঙ্গার সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে ক্রমান্বয়ে।
এর আগে ২০ থেকে ২২ আগস্ট পর্যন্ত একই শিবিরে ইউএনএইচসিআর এবং শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ের কর্মকর্তারা প্রত্যাবাসনে তালিকাভুক্ত ৩৩৯টি পরিবারের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন।
পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ৩ হাজার ৫৪০টি পরিবারের প্রত্যাবাসন হওয়ার কথা থাকলেও গত ২২ আগস্ট নির্ধারিত তারিখে রোহিঙ্গাদের অনীহার কারণে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া দ্বিতীয়বারের মতো স্থগিত হয়ে যায়। প্রত্যাবাসনের তালিকাভূক্তদের মধ্যে শালবাগান রোহিঙ্গা শিবিরে ৯৩৩ পরিবারের ৩ হাজার ৪৫০ জনের নাম রয়েছে।
এর আগের সাক্ষাৎকারে রোহিঙ্গারা নাগরিকত্ব, নিরাপত্তা এবং মিয়ানমারে গণহত্যাকারীদের বিচার চেয়েছেন। একই সঙ্গে নিজেদের ফেলে আসা সম্পত্তির অধিকার এবং ক্ষতিপূরণ চান রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা।
সাক্ষাৎকার দিয়ে আসা আনোয়ারা বেগম (২৬) বলেন, আমার কাছে জানতে চায় মিয়ানমারে যাব কিনা? জবাবে 'না' বলেছি।
কেন যাবেন না জানতে চাইলে, ''ফেলে আসা সহায়-সম্বল, নাগরিকত্ব ও গণহত্যার বিচার পেলে যাওয়ার কথা বলেছি।”
আনোয়ারা বেগমের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা স্বামী নুরুল আলমের কোলে ছিল ৩ মাসের ফুটফুটে সন্তান ফয়েজ। তাকে দেখিয়ে আনোয়ারা বেগম বলেন, কেমনে মিয়ানমার ফিরে যাই বলেন? প্রত্যাবাসনের তালিকায় স্বামী ও সন্তানের নাম নেই। তাদের ছাড়া সেখানে কী করব? যেখানে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছি সেখানে কি আবার মরতে যাব? সেখানে এখনও আমাদের যাওয়ার মতো পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি।
প্রত্যাবাসন কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, শালবাগান রোহিঙ্গা শিবির ছাড়াও নতুন করে আগামী সপ্তাহে লেদা রোহিঙ্গা শিবিরের ২৪ ও ২৫ নম্বর ক্যাম্পের প্রত্যাবাসনের তালিকায় নাম থাকা রোহিঙ্গাদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে। যে রোহিঙ্গারা ইতিমধ্যে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তাদের কেউ শর্তবিহীন মিয়ানমারে ফিরতে রাজি হননি।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা