নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা নোয়াখালীবাসীর আপ্যায়ন এবং থাকা-খাওয়ার সু-ব্যবস্থা করায় মুগ্ধ তারা।
জানা যায়, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র শহিদ উল্লা খান সোহেল, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ.কে.এম সামছুউদ্দিন জেহান, রেডক্রিসেন্টের পক্ষ থেকে অ্যাডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহীন ও স্থানীয় সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ব্যক্তিগত উদ্যোগে পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের থাকা, খাওয়া, চিকিৎসাসহ যাবতীয় সু-ব্যবস্থা করেছেন এবং তাদের উদ্যোগে শত শত স্বেচ্ছাসেবক রাস্তায় যানজট নিরসনে গত দু’দিন থেকে ট্রাফিকের ভূমিকায় সার্ভিস দিচ্ছেন।
এছাড়াও শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে জেলা শহরের প্রধান সড়কে খোলা হয়েছে অসংখ্য তথ্য কেন্দ্র। তারা দিন রাত সারাক্ষণ পরীক্ষার্থীদের সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছেন।
বুধবার দুপুরের পর থেকেই ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা নোয়াখালীতে আসতে শুরু করেন। প্রায় ৭০ হাজার পরীক্ষার্থীসহ দেড় লাখ লোকের সমাগম হয় জেলা শহরে। স্বেচ্ছাসেবকরা তাদেরকে নোয়াখালী পৌরসভা, সদর উপজেলা পরিষদ ও রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি ভবনসহ বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দেন। সেখানে বিনা খরচে তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে পুরো জেলায় উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। নোয়াখালী জেলাবাসীর এই অসাধারণ আপ্যায়নে মুগ্ধ হন শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা।
এই ব্যাপারে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম থেকে আসা পরীক্ষার্থী রুবেল রানা, আরিফ উল্যা, সফিকুল ইসলাম, তৌহিদ, নেজাম উদ্দিন ও জান্নাতুল মাওয়া জানান, আমরা সত্যি অবাক হয়েছি, নোয়াখালীতে পরীক্ষা দিতে না আসলে বুঝতেই পারতাম না-যে নোয়াখালীর মানুষ এত উদার, আমরা তাদের আপ্যায়নে খুবই মুগ্ধ।
কুষ্টিয়া থেকে আসা আবদুল করিম নামে এক অভিভাবক ও ঢাকা থেকে আসা সামছুন নাহার নামে আরেক অভিভাবক জানান, আমরা এক সময় নোয়াখালী নিয়ে আমাদের বিরূপ ধারণা ছিল। এখন ছেলে-মেয়েদের ভর্তি পরীক্ষার জন্য নোয়াখালীতে এসে যেটা দেখলাম সত্যি আমাদের ধারণা পাল্টে গেল। নোয়াখালীবাসীর আন্তরিকতায় আমরা মুগ্ধ হয়েছি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নোয়াখালী জেলা শহরের ব্যবসায়ী ও সংগঠক মাসুদুর রহমান জানান, নোয়াখালীর মানুষ বরাবরই মেহমানদের আপ্যায়নের সুনাম রয়েছে। এই সুনাম এখন দেশ চেড়ে আন্তর্জাতিকভাবে ছড়িয়ে গেছে।
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা শুক্রবার ও শনিবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবার ৩০টি বিষয়ের ১ হাজার ২৮৫ আসনের বিপরীতে ৬৮ হাজার ৭৬০টি পরীক্ষার্থী রয়েছে। এ পরীক্ষা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে শেষ করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পাশাপশি স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দল, ছাত্র সংগঠনসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিবাকসহ নোয়াখালীতে দেড় লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হয়। অতীতের মতো এবারও এ বিপুল সংখ্যক মানুষের বিনা খরচে থাকা-খাওয়া, পরীক্ষা কেন্দ্রে যাতায়াত এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা লক্ষ্যে স্থানীয় সংসদ সদস্য, নোয়াখালী পৌরসভা, সদর উপজেলা পরিষদ, জেলা রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি, জেলা আওয়ামী লীগ, জেলা ছাত্রলীগ, ছাত্রদলসহ বিভিন্ন সংগঠন যে যার অবস্থান থেকে উদ্যোগ নিয়েছে।
শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে বিভিন্ন স্থানে খোলা হয়েছে তথ্য কেন্দ্র। মোড়ে মোড়ে বিলবোর্ডে প্রয়োজনীয় তথ্য দেওয়া হয়েছে। বুধবার রাত থেকে প্রচার মাইকে শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় আহ্বান জানানো হচ্ছে। অপরিচিত জায়গায় মানুষের এরকম আন্তরিকতা ও আতিথেয়তায় মুদ্ধ শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। একইভাবে এমপি একরামুল করিম চৌধুরীর পক্ষ থেকে ও যাবতীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের জন্য সব ধরনের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে বলে জানান নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র শহীদ উল্লা খান।
শিক্ষার্থীদের জন্য পরিবহন ও প্রাথমিক চিকিৎসা ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম শামছুদ্দিন জেহান।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন