কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির এবং স্থানীয় বাসিন্দারের জন্য পরিচালিত যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বেশ কয়েকটি প্রকল্প পরিদর্শন করে গেলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুই শীর্ষ কর্মকর্তা।
বৃহস্পতিবার সকালে মার্কিন সরকারের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলিচ ওয়েলস কক্সবাজারের টেকনাফের শামলাপুর শরণার্থী শিবির এবং ইউএসএআইডি’র উপ প্রশাসক বনি গ্লিক কক্সবাজার সদর ও রামুর বিভিন্ন প্রকল্প পরিদর্শনে যান।
সকালে টেকনাফের শামলাপুর শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন শেষে দুপুরে কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন সরকারের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলিচ ওয়েলস।
বৈঠক শেষে তিনি বলেছেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারে নিরাপদ পরিবেশ দরকার। প্রত্যাবাসন অবশ্যই স্বেচ্ছায়, নিরাপদে এবং মর্যাদাপূর্ণ হতে হবে।
তিনি কক্সবাজারের টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন শেষে দুপুরে কক্সবাজার শরণার্থী ত্রান ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। এসময় তিনি আরও বলেন, থাইল্যোন্ডে অনুষ্ঠিত উন্দো-ফ্যাসিফিক সন্মেলনে এই বিষয়টির উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন তরান্বিত করতে সকল আন্তজার্তিক সম্প্রদায়কে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের অবস্থানের কারণে এখানকার স্থানীয় বাসিন্দাদের নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, প্রত্যাবাসনের পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের উপর যে জাতিগত নিধনসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ সংঘঠিত হয়েছে এসব বিষয় নিয়েও চিন্তা করা দরকার। আমরা আরও চিন্তা করছি রোহিঙ্গা সমস্যার যাতে দ্রুত এবং টেকসই সমাধান হয় সে জন্য আন্তজার্তিক সম্প্রদায়কে কাজ করতে হবে।
বৈঠকে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. মাহাবুব আলম তালুকদারসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বিভিন্ন প্রকল্প পরিদর্শন শেষে ইউএসএআইডি’র উপ প্রশাসক বনি গ্লিক সাংবাদিকদের বলেন, রোহিঙ্গা সংকট বর্তমানে একটি আন্তজার্তিক সমস্যা। সারাবিশ্ব এই সমস্যা নিয়ে উদ্বিগ্ন। এটি মূলত মিয়ানমারের কারণেই হয়েছে। বাংলাদেশে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে সারাবিশ্বে প্রশংসা কুড়িয়েছে।
এ সময় তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সৃষ্টি করেছে মিয়ানমার সরকার। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের জন্য মার্কিন সরকার মিয়ানমারের উপর চাপ সৃষ্টি করে আসছে। ট্রাম্প সরকার ইতিমধ্যে মিয়ানমার সরকারের উপর অর্থনৈতিক নানা বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে, চার সামরিক কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞাও জারি করেছে।
তিনি বলেন, মার্কিন সরকার চায় রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ স্বেচ্ছামূলক প্রত্যাবাসন। এ ব্যাপারে আন্তজার্তিক সম্প্রদায়কে নিয়ে মার্কিন সরকার রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে।
তিনি আরও বলেন, মানব পাচারের জন্য বাংলাদেশ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। মানব পাচার এ দেশের অন্যতম সমস্যা। এটি ক্রমান্বয়ে ঝুঁকির দিকে যাচ্ছে। বিশেষ করে মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের ক্যাম্পে রয়েছে। তারাও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বাংলাদেশকে মানব পাচার রোধে কাজ করতে হবে। ইউএসএআইডি মানব পাচার প্রতিরোধে বাংলাদেশকে নানাভাবে সহযোগিতা দিয়ে আসছে।
এসময় তিনি কক্সবাজার সদরের পাওয়ার হাউস এলাকায় বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা ইপসা’র ভিকটিম শেল্টার হোম এবং রামুতে ইউএিএআইডি’র অর্থায়নে বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা কর্মকাণ্ড পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি দরিদ্র নারীদের সঙ্গে স্যানিটেশন বিষয়ে মতবিনিময় করেন এবং স্কুল শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় নাটিকা উপভোগ করেন।
বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ