বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন ৭ ডিসেম্বর। বগুড়ার তৃণমূল নেতাকর্মীরা আশা করছেন এ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে দলের জন্য নিবেদিতরাই নেতৃত্বে আসবেন। স্বচ্ছ ভাবমূর্তি যাদের আছে, তারাই গুরুত্বপূর্ণ পদে আসবেন বলে দলটির শীর্ষ নেতারা বলছেন। জেলা কমিটির সম্মেলন কেন্দ্র করে প্রায় ১ ডজন নেতা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দলের শীর্ষ পদ পেতে তরুণ নেতারা লবিং শুরু করেছেন। নবীণ প্রবীণ মিলে প্রায় এক ডজন নেতা এবার জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। শহরের বিভিন্ন স্থানে টানানো হয়েছে বড়বড় ব্যানার। সাঁটানো হয়েছে পোস্টার। চলছে নিজস্ব কর্মী দিয়ে প্রচারণা।
জানা গেছে, সর্বশেষ ২০১৪ সালের ১০ ডিসেম্বর বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে জেলার প্রবীণ নেতা মমতাজ উদ্দিন সভাপতি ও মজিবর রহমান মজনু সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন মারা যান। জেলা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন ডা: মকবুল হোসেন। একদিকে পদে শূন্যতা, অপরদিকে কাউন্সিলকে ঘিরে দলের ডজন খানেক নেতা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হওয়ার জন্য কেন্দ্র থেকে শুরু করে বিভিন্নভাবে প্রচার প্রচারণা ও তদবির করছেন।
কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে সম্মেলন হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ হলেও ভিতরে ভিতরে অনেকেই পদ পেতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিছু নেতা জেলার মূল পদ বাগিয়ে নিতে ছোট ছোট দলে নিয়মিত দলীয় কার্যালয়ে আসছেন। কর্মীদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন। ইউনিয়ন, ওয়ার্ড, উপজেলার নেতাকর্মীদের সাথে আগের থেকে সখ্যতা বাড়িয়ে দিয়েছেন। জেলা কমিটির সম্মেলন যে হচ্ছে তার আগাম প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গেছে। জেলা আওয়ামী লীগ থেকে ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি নিতে সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু করেছে। ওয়ার্ড, ইউনিয়ন কমিটি গঠন করে উপজেলা সম্মেলনের তাগিদ দেয়া হয়েছে জেলা কমিটি থেকে। এরই মধ্যে কয়েকটি ইউনিয়ন ও ধুনট উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা হয়েছে। অন্যান্য ইউনিটেও কাজ চলছে বলে জেলা কমিটির নেতারা জানিয়েছেন। এদিকে আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীরা বলছেন, সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব গড়ে উঠুক। সম্মেলন না হলে কর্মী মূল্যায়ন হবে না এবং দলে শৃঙ্খলও থাকে না। স্বচ্ছ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন নেতারা এবার জেলা কমিটিতে স্থান পাবে বলে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে।
বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলা আওয়ামী লীগের ১৩ ইউনিটের সবগুলোর মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। এরমধ্যে বগুড়া পৌর কমিটি গত নভেম্বর মাসের ১৭ তারিখ নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠন হয়েছে।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভা থেকে গণতান্ত্রিক পন্থায় তৃণমূল পর্যায় থেকে সদস্য সংগ্রহ অভিযান শেষে পর্যায়ক্রমে সকল সাংগঠনিক শাখার সম্মেলন করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এই সভার পর থেকে আওয়ামী লীগের সিনিয়র ও জুনিয়র নেতাকর্মীদের কাজে যেন গতি বেড়েছে। দলের শীর্ষ পদ পেতে তরুণ নেতারা লবিং শুরু করেছেন। বসে নেই সিনিয়র নেতারাও। নবীণ প্রবীণ মিলে প্রায় ১ ডজন নেতা এবার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে লড়বেন বলে জানা গেছে।
বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ প্রত্যাশী সম্ভাব্য নেতৃবৃন্দ হলেন জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মজিবর রহমান মজনু, সহ-সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন দুলু মাস্টার, এ্যাড. রেজাউল করিম মন্টু, এড. মকবুল হোসেন মুকুল, বর্তমান কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা: মকবুল হোসেন। সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হতে পারেন জেলা কমিটির তিন যুগ্ম সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু, টি জামান নিকেতা, মঞ্জুরুল আলম মোহন, সাবেক ছাত্রনেতা বর্তমান জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুর রহমান দুলু , প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সুলতান মাহমুদ খান রনি, বগুড়া পেীর আওয়ামী লীগের নবর্নিবাচিত সভাপতি রফি নেওয়াজ খান রবিন ও সোনাতলা উপজেলা চেয়ারম্যান এ্যাড: মিনহাদুজ্জামান লিটনও প্রার্থী হতে পারেন।
কারা হচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের আগামীর কাণ্ডারি
দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অনেকে আছেন যারা শুধু নামেই বিরাট নেতা, সাধারণ কর্মীর পাশে তাদের যেমন পাওয়া যায় না। তেমনি দলীয় কাজেও সময় ও অর্থ ব্যয় করেন না।
বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা: মকবুল হোসেন জানান, দলের জন্য তিনি নিবেদিত হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। কেন্দ্রীয়ভাবে যে সিদ্ধান্ত হবে সে মোতাবেক কাজ করে যাব।
বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক মজিবর রহমান মজনু বলেন, দলের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে হবে। এই মুহূর্তে শক্তভাবে দলের হাল না ধরলে এই অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। সঠিক নেতৃত্ব দিতে পারলে দলের শৃঙ্খলাও বাড়বে। কেন্দ্রীয়ভাবে যে নির্দেশনা ও দল গঠন প্রক্রিয়া হবে সেটি পালনে সর্বোচ্চ সচেষ্ট হবেন।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা