সিনেমার কাহিনীকেও যেন হার মানাবে নাটোরের বাগাতিপাড়ার মুন্নীর জীবনের গল্প। হারিয়ে যাওয়া সাত বছরের শিশু মুন্নী দীর্ঘ ৩৩ বছর পর ফিরে পেল তার পরিবারকে। মুন্নী নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার মৃত মুনছের আলী ও নাজমা বেগমের মেয়ে।
৩৩ বছর আগে লালপুর উপজেলায় নানার বাড়ি বেড়াতে গিয়ে হারিয়ে যায় মুন্নী। সেই সন্তানকেই গত কয়েকদিন আগে ফিরে পেয়েছে তার পরিবার।
জানা যায়, নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের সলইপাড়া গ্রামের মৃত মুনছের আলী ও নাজমা বেগমের মেয়ে মুন্নী। ১৯৮৬ সালে পার্শ্ববর্তী লালপুর উপজেলার আব্দুলপুর মিলকিপাড়া গ্রামে মায়ের সাথে নানার বাড়ি বেড়াতে গিয়ে হারিয়ে যায় ৭ বছরের শিশু মুন্নী। তখন থেকেই শিশু সন্তানকে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও কোন সন্ধান পাননি তার পরিবার। দীর্ঘ ৩৩ বছর পর পারিবারকে খুঁজে পেয়ে মুন্নী তার স্বামী সন্তানকে নিয়ে নায়রে আসেন মায়ের বাড়ি। মা তার সন্তানকে পেয়ে যেমন খুঁশি, মাকে ও পরিবারকে খুঁজে পেয়ে তেমনি আপ্লুত মুন্নী ও তার পরিবার।
ঘটনাক্রমে শিশু মুন্নী হারিয়ে যাওয়ার পর নাটোরের লালপুর উপজেলার গোপালপুর স্কুলের পাশে নির্জনে বসে থাকতে দেখে স্থানীয় একজন। এরপর ওই শিশুকে নিয়ে যান এলাকার চেয়ারম্যানের কাছে। এরপর তৎকালীন গোপালপুর ইউপি চেয়ারম্যান মৃত মাহাবুদ্দিন আহম্মেদ সাধু পরিচয়হীন শিশু মুন্নীর দায়িত্ব নেন এবং তার নাম রাখেন আছিয়া। এর পর লালন পালন করে শিশু আছিয়া বড় হলে একই এলাকার বাহার উদ্দিনের ছেলে সোনালী ব্যাংকে কর্মরত আমিরুলের সাথে বিয়ে দেন। এখন তাদের সংসারে দুটি পুত্র সন্তান।
কিছুদিন পূর্বে নিকট আত্মীয়র মাধ্যমে মুন্নীর খোঁজ পান তার পরিবার। চোখের পাতার নিচে তিল, হাতে পোড়া দাগ দেখে মাসহ আত্মীয়স্বজনরা মুন্নীই যে তাদের হারিয়ে যাওয়া মেয়ে সেটা সনাক্ত করেন।
মুন্নী ওরফে আছিয়া জানান, অনেক বাবা মা তাদের হারিয়ে যাওয়া সন্তান খুঁজতে তাকে দেখতে এসেছে। দীর্ঘ ৩৩ বছর পর আমার মা ও পরিবার আমার চোখের পাতার নিচে তিল হাতে পোড়া দাগ এবং কপালে দাগ দেখে আমিই যে তাদের হারিয়ে যাওয়া মুন্নী সেটা প্রমাণ করেছে। আমি আমার পরিবারকে পেয়ে আনন্দিত অনেক খুশি।
মুন্নীর মা নাজমা বেগম বলেন, আমার সন্তানকে পেয়ে আমিসহ আমার পরিবার অনেক খুশি।
মুন্নীর স্বামী জানান, আমার স্ত্রী তার পরিবারের সন্ধান না পেয়ে অনেক কষ্টে ছিল। এখন তার চোখে মুখে আনন্দ দেখে আমি অনেক খুশি। পাশাপাশি আমি নতুন পরিবারে এসে আনন্দিত এবং তারা খুবই ভালো মানুষ।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল