চুক্তি অনুযায়ী ২০১৮ সালের ২৭ মে কার্যাদেশ পাওয়া জয়পুরহাট-আক্কেলপুর সড়কের ১৮ কিলোমিটার উন্নয়ন ও প্রশস্তকরণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা গত বছরের ২৬ আগস্ট। নির্ধারিত সময়ে কাজের অগ্রগতি না হওয়ায় ঠিকাদারের আবেদনের প্রেক্ষিতে দুই দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে ২৫ মাস অর্থাৎ সর্বশেষ এ বছরের ১৫ জুন পর্যন্ত কাজের সময় সীমা নির্ধারণ করা হয়।
কিন্তু ২৭ মাস সময় অতিবাহিত হলেও কাজটির বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৫৬ ভাগ। অথচ উন্নয়নের জন্য কাজের শুরু থেকে সড়কটির কার্পেটিং তুলে সময় মত কাজ শেষ না করায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে ওই এলাকার হাজার হাজার মানুষ। প্রতিদিন বিকল হচ্ছে অসংখ্য যানবাহন।
জয়পুরহাট রেলগেট থেকে শিবগঞ্জ উপজেলার মোকামতলা পর্যন্ত প্রায় ৩৬ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়কের দু’ধারে ২৪ ফুট প্রশস্তকরণের জন্য গত ২০১৭ সালের ১০ এপ্রিল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় টাকা বরাদ্দ হয়। ৩৬ কিলোমিটার সড়কটি ৩টি প্যাকেজে টেন্ডার হয়েছে।
এই প্যাকেজগুলিও সব কাজই শেষ করা কথা ছিল চলতি গত বছরের আগস্টের মধ্যে। কিন্তু তা না করে রাস্তার পার্শ্বে গাছ কেটে রাস্তা পুরাতন কার্পেটিং তুলে নতুন করে বালু, খোয়া ও পাথর কোন রকমে দেবে দিয়েছে। বর্তমান এই সড়কটির উপরিভাগের ইটের খোয়া ও পাথরগুলো রোলার না করায় বিভিন্ন স্থানে ছোট ও বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। ওই সড়কে বিছানো বালু, ইটের খোয়া, পাথরগুলো গত কয়েক সপ্তাহ বৃষ্টির পানি ও ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে ওই সড়কে অসংখ্য ছোট বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। সেই সঙ্গে বর্তমান ওই সড়কের কাজ বন্ধ রেখেছে তারা। এই রাস্তায় বর্ষার পানিতে কখনো পানি জমছে।
আবার কখনো ধুলায় রাস্তা দিয়ে যাতয়াত করা অনুপোযোগী হয়েছে। সময় পার হয়ে গেলেও এই ৩৬ কিলোমিটার রাস্তার অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৪০ ভাগ। কিন্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টাকা উঠিয়ে নিয়েছে ৬০ ভাগের মত। এছাড়া জয়পুরহাট- হিলি সড়কের প্রশস্তকরন এবং উন্নয়ন কাজ মুখ থুবরে পড়ে আছে।
জয়পুরহাটের তিনটি আঞ্চলিক মহাসড়কের উন্নয়ন কাজে চলছে এ ভাবেই। আর এসব সড়কে প্রায় দুর্ঘটনায় প্রাণ ঝড়ছে। বাড়ছে দুর্ঘটনা, নষ্ট হচ্ছে যানবাহন। নির্ধারিত সময়ে শেষ না হওয়ায় জয়পুরহাট জেলা পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলি রাস্তা মেরামতের জন্য মানববন্ধন এবং দিনব্যাপি ধর্মঘট পর্যন্ত করেছে। এরপর সড়কগুলোতে কাজের গতি আসেনি।
এই সড়ক দিয়ে চলাচলকারী মালবাহী ট্রাকের চালক শহীদুল ইসলাম মিলন হোসেন জানান, প্রায় দুই বছর ধরে এই সড়ক দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। এই সড়কে অনেক ট্রাক ও বাসের বেশ কয়েক বার ছোট বড় দুর্ঘটনাও ঘটেছে। গাড়ীর স্প্রিং পাতি ভেঙ্গেছে কয়েকবার।
জেলার মটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বলেন, রাস্তা সংস্কারের নামে বছরের পর বছর রাস্তার কার্পেটিং তুলে খানা খন্দের সৃষ্টি করে রেেখছে। প্রতিদিনই যানবান বিকল হচ্ছে এসব রাস্তায় গাড়ী চলানোর অযোগ্য হয়ে পড়েছে। রাস্তা সংস্কারের জন্য স্মারকলিপি, মানববন্ধন এবং দিনব্যাপি পরিবহন ধর্মঘট কারা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোন ফলই পাননি। এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
জেলার সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জাকির হোসেন বলেন, কাজ না করার ফলে গত বছর ওই প্রকল্পের ১২ কোটি ৭০ লাখ টাকা ফেরত গেছে। চুক্তি অনুযায়ী ১৫ মাসের কাজ ২৫ মাসেও শেষ না হওয়ায় মানুষের ভোগান্তি লাঘবে ২৮ দিনের মধ্যে সাইটে পর্যাপ্ত মালামাল ও লোকবল এনে সড়কটির কাজ শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। অন্যথায় চুক্তি বাতিল করে অন্য ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হবে।
বিডি প্রতিদিন/আল আমীন