লক্ষ্মীপুরে শিশু শিমুল হত্যাকাণ্ডের ঘটনার মামলায় গ্রেফতারকৃত আসামি স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা তাজুল ইসলামকে নিয়ে আওয়ামী লীগের দু’পক্ষের মুখোমুখি অবস্থান বিরাজ করছে। রবিবার (০৮ নভেম্বর) স্থানীয় চন্দ্রগঞ্জ বাজারে সকাল ১০ টা ও দুপুর ১ টায় পৃথক কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। এ নিয়ে ওই এলাকাজুড়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। যে কোন অস্থীতিশীল পরিস্থিতি এড়াতে ঘটনাস্থালে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
জানা যায়, ২০১৪ সালে বিএনপি’র স্থানীয় শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান ও নাছির বাহিনীর আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে চন্দ্রগঞ্জের পশ্চিম লতিফপুরে দু’পক্ষের সংঘর্ষ হয়। এসময় নাছির বাহিনীর সমর্থকদের বাড়িতে হামলা চালায় জিসান বাহিনী। এতে অগ্নিদগ্ধ হয়ে নিহত হয় প্রতাপগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের তৎকালীন ৮ম শ্রেণির ছাত্র ও বর্তমান চন্দ্রগঞ্জ ছাত্রলীগের আহবায়ক কাজী বাবলুর ভাগিনা শিশু ছাত্র শিমুল। পরে এ ঘটনায় অজ্ঞাত আসামি করে থানায় মামলা করে বাবলু। একই ঘটনায় ১৫-২০ জনকে আসামি করে আবারো মামলা করা হয়। এরপর বাদীর আবেদনের প্রেক্ষিতে পিবিআইকে মামলার তদন্ত দেয়া হয়। পিবিআই ওই মামলার তদন্ত শেষে ৭ জনের বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে। সম্প্রতি ওই প্রতিবেদনের আলোকে ৪ নম্বর আসামি তৎকালীন জিসান বাহিনীর সদস্য ও ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের বর্তমান সভাপতি তাজুল ইসলামকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায় পুলিশ।
রবিবার তার মুক্তির দাবিতে স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আমিন জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ ও স্থানীয় নেতাকর্মীদের একাংশকে সাথে নিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ সভাপতি বেলায়েত হোসেন বেলাল ও সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ হোসেন, আলাউদ্দিন প্রমুখ। বক্তারা তাজুকে নির্দোষ ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় হত্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে দাবি করে অবিলম্বে তার নি:শর্ত মুক্তির দাবি জানান। এসময় বক্তাদের কেউ কেউ ছাত্রলীগ নেতা ও মামলার বাদীকে ডাকাত আখ্যা দিয়ে তাকে গ্রেফতার করে মামলা ও হত্যার মূল রহস্য উৎঘাটনের দাবি জানান।
এদিকে একই দিন একই স্থানে দুপুরে সর্বস্তরের জনগণের ব্যানার নিয়ে শিশু হত্যার বিচার দাবিতে পাল্টা মানববন্ধন করা হয়। এসময় স্থানীয় চন্দ্রগঞ্জ থানা ১৪ দলীয় জোটের আহবায়ক সাবির আহমদ, আওয়ামী লীগ নেতা কাজী সোলায়মান, খলিলুর রহমান, মনছুর আহমদ ও কাজী বাবলুসহ অনেকে বক্তব্য রাখেন।
বক্তারা তাজুল ইসলামকে খুনি, চোর ও বিএনপি থেকে অনুপ্রবেশের অভিযোগ তুলে পিবিআইয়ের প্রতিবেদনের আলোকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে দাবি করে তাজুসহ সকল খুনিদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
এদিকে আওয়ামী লীগের দু’পক্ষের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে দলীয় নেতা-কর্মী ও সাধারণ ব্যবসায়ীদের মাঝে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। যে কোন মুহূর্তে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কাও করছেন তারা। সাধারণ মানুষ বলছেন সন্ত্রাসের জনপদ হিসেবে খ্যাত লক্ষ্মীপুরের পূর্বাঞ্চল চন্দ্রগঞ্জ আবারো উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। যে কোন প্রাণহাণিসহ অনাকাঙ্খিত ঘটনার আগেই সংশ্লিষ্টদের ব্যবস্থা নেয়ার দাবি তাদের।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল