বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার জংশন স্টেশনে কিশোর অপরাধীদের অবাধ তৎপরতা বেড়েছে। এ কারণে ছিনতাই, পকেটমার, নারী যাত্রীদের উত্ত্যক্ত করার ঘটনা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সকল অপরাধীদের বিরুদ্ধে স্টেশনের বিভিন্ন স্থানে মাদক সেবন ও বিক্রি করার অভিযোগও পাওয়া গেছে। কিশোর অপরাধীদের অত্যাচারে ট্রেন যাত্রীরা চরম বিড়ম্বনা নিয়ে যাতায়াত করছেন।
সান্তাহার জংশন স্টেশন থেকে প্রতিদিন জেলা শহর বগুড়া, জয়পুরহাট, নাটোরসহ অন্যান্য স্থানে ট্রেনে যাতায়াত করেন এমন কয়েকজন যাত্রী অভিযোগ করেন, বর্তমানে সান্তাহার জংশন স্টেশনের যাত্রীদের কোনো নিরাপত্তা নেই। ট্রেনে যাতায়াতকারী যাত্রীদের প্রায় কিশোর অপরাধীদের খপ্পরে পড়তে হয়।
সরেজমিন স্টেশন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, স্টেশনের ৪ নম্বর ও ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্ম এবং পথচারী সেতুর (ওভার ব্রিজ) উপর ১০ থেকে ১২ জন বখাটে কিশোর বসে রয়েছে। তাদের ছবি তুলতে গেলে দৌড়ে পালিয়ে যায়।
স্টেশনের পাশে জোড়া পুকুর এলাকায় গিয়ে দেখা মেলে রতন ও সবুজ নামের দুই মাদকসেবীর। তারা সেখানে বসে নেশা সেবন করছে। তারা বলেন, অনেকেই এখানে বসে নেশা করে।
সন্ধ্যা নেমে আসার সাথে সাথে প্রায় অর্ধ-শতাধিক কিশোর এসে জড়ো হয় স্টেশন এলাকায়। এদের মধ্যে ৮-১০ জন উঠে পড়ে মিটারগ্রেজ লাইনের পথচারী সেতুর উপর। বাকিরা অবস্থান নেয় স্টেশনের বটতলি, পুরাতন হিন্দু হোটেল ও জিআরপি থানার পেছনে।
এ সকল কিশোর অপরাধীদের অধিকাংশ মাদক সেবী। তারা পথচারী সেতুর উপর বসেই মাদক সেবন এবং কেনাবেচার পাশাপশি জুয়ার আসর বসিয়ে মত্ত ছিলেন। স্টেশনের এক শ্রমিক (কুলি) বলেন, সুযোগ পেলেই তারা যাত্রীদের ব্যাগ ছিনতাই করে পাশের জোড়া পুকুরের মধ্যের রাস্তা দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়।
ঢাকাগামী আন্তঃনগর দ্রুতযান এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী ও নওগাঁ শহরের কালিতলা এলাকার বাসিন্দা কামরুল হাসান জানান, ট্রেনে তার এক আত্মীয়কে তুলে দিতে এসেছিলেন। কিন্তু ভিড়ের মাঝে তার মানিব্যাগটি খোয়া গেছে।
সাবেক স্টেশন মাস্টার রেজাউল করিম জানান, কয়েকদিন আগে এক যাত্রী তাকে জানিয়েছে, ট্রেনে ওঠার সময় তার ১৪ হাজার টাকাসহ ব্যাগ খোয়া গেছে। ব্যবসায়ী ময়েন উদ্দীন বলেন, তার এক আত্মীয়ের প্রায় ৩০ হাজার টাকা মূল্যের মুঠোফোন সান্তাহার স্টেশন থেকে খোয়া গেছে।
স্টেশনে টাকা ও মুঠোফোন ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা নিত্য দিনের। এ সকল বিষয় জিআরপি পুলিশকে জানাতে গেলে পুলিশ মামলা করতে বলে। এ কারণে বেশির ভাগ যাত্রী ঝামেলা এড়াতে ক্ষতি মেনে নিয়ে স্টেশন ত্যাগ করে।
স্টেশন এলাকায় জিআরপি পুলিশ ও রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর দুজন করে সদস্য সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনের কথা থাকলেও অধিকাংশ সময় কাউকে স্টেশনে পাওয়া যায় না। এ কারণে অপরাধীরা নির্বিঘ্নে তাদের অপরাধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায়।
সান্তাহার জিআরপি থানা সূত্রে জানা গেছে, গত তিন মাসে থানায় এ সংক্রান্ত কোনো মামলা বা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা হয়নি।
স্টেশনের ওয়াক্তিয়া মসজিদের মুসল্লী ময়েন উদ্দীন, টিপু হোসেন, স্বপন হোসেনসহ আরো কয়েকজন তাদের অভিযোগে বলেন, বখাটেদের অত্যাচারে মসজিদে নামাজ আদায় করা কঠিন হয়ে পড়ে। বখাটেরা মসজিদের আশপাশে থেকে নামাজের সময় উচ্চস্বরে গান বাজনাসহ হইচই করে। মেয়ে দেখলেই তাদের উত্ত্যক্ত করে।
সান্তাহার জিআরপি থানার ওসি (পরিদর্শক) মনজের আলী বিষয়গুলো খতিয়ে দেখার প্রতিশ্রুতি দিলেও বন্ধ হয়নি অপরাধীদের স্টেশনে অবাধ বিচরণ এবং অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড।
বিডি প্রতিদিন/এমআই