মাদারীপুরে পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থীর সঙ্গে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া সেই শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিরাজ হোসেন এখনো তার স্বপদে বহাল রয়েছেন। এদিকে দায়িত্বে অবহেলার স্বপ্রণোদিত অভিযোগ থাকায় জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে বুধবার বিকালে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে এই কমিটি জেলা পুলিশ সুপারের কাছে প্রতিবেদন জমা দেবে।
তদন্ত কমিটির সভাপতি হলেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) চাইলাউ মারমা, সদস্য সচিব সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (শিবচর সার্কেল) আবির হোসেন এবং কমিটির সদস্য শিবচর সার্কেল অফিসের পরিদর্শক আনোয়ারুল করিম।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) চাইলাউ মারমা। তিনি বলেন, ‘শিবচর থাকার ওসির দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ ওঠায় জেলা পুলিশ সুপার আমাকে সভাপতি করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করে দিয়েছেন। এই কমিটি পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে জেলা পুলিশ সুপার মহোদয়ের কাছ প্রতিবেদন জমা দেবে।’
ওসিকে স্বপদে রেখেই কি তদন্ত কমিটি করা হচ্ছে, এমন প্রশ্ন করা হলে চাইলাউ মারমা বলেন, ওসি তার স্বপদে বহাল থাকার বিষয়টি এসপি স্যার জানেন। এ বিষয়টি আমরা বলতে পারব না।’
এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. আওলাদ হোসেন খানের সঙ্গে মনোনয়নপত্র জমা দেন শিবচর থানার ওসি। শিবচর পৌরসভা রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামানের কাছে মনোনয়নপত্র দাখিল করার পরেই সেই ছবি ও ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তেই ওসির ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়। পুরো জেলাজুড়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। ওসির দায়িত্বে অবহেলা নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠার পরেও সেই ওসিকে তার স্বপদে বহাল রাখায় নতুন করে সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে।
নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ছাড়া কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোনো প্রার্থীর সঙ্গে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া চাকরির বিধি লঙ্ঘন বলে মনে করেন জেলা সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি খান মো. শহীদ। তিনি ওসির এমন কাণ্ড নিয়ে বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কখনোই প্রার্থীর স্বপক্ষে দাঁড়িয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারে না। এটি একদিকে তার চাকরির বিধি লঙ্ঘন অন্যদিকে দায়িত্বের অবেহলা। একটি থানার আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে সর্বোচ্চ ভূমিকায় থাকেন ওসি। আর সেই ওসিই যদি তার দায়িত্ব ও আদর্শকে অমান্য করে কোনো কাজ করেন, তাহলে তিনি তার স্বপদে থাকার যোগ্যতা হারান।’
এ ব্যাপারে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘ওসি তার কাজের বিধি লঙ্ঘন করেছেন, এ বিষয় কোনো সন্দেহ নেই। নিঃসন্দেহে এটি ওসির দায়িত্বের অবহেলা ও প্রার্থীর আচারণবিধি লঙ্ঘন। সেই হিসেবে ওসি এখনো সেখানে থাকার কথা না। নির্বাচন কমিশনকে বিষয়টি জানানো হবে।'
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ