নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে চলছে শতাধিক ইটভাটা। অধিকাংশ ভাটার পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন ছাড়পত্র নেই। জনবসতি পূর্ণ এলাকা, স্কুল কলেজের পাশে এবং আবাদি জমি নষ্ট করে গড়ে উঠেছে এসব ইটভাটা।
ফশলী জমি কেটে মাটি সংগ্রহ করে তৈরী করা হচ্ছে ইট। অধিকাংশ ভাটায় ইট তৈরী করা হচ্ছে বন উজার করে গাছ পুড়িয়ে । ফলে ভাটার বিষাক্ত ধোয়া এবং ধুলায় বিনষ্ট হচ্ছে জীব বৈচিত্র, প্রকৃতি ও পরিবেশ । জনস্বাস্থ্য পড়েছে হুমকির মুখে। ফশল উৎপাদনে কৃষকদের লোকশান গুনতে হচ্ছে। ভাটা মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ মুখ খুলতে পারছেন না। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইন অমান্য করে এসব ভাটা চলছে।
২০০০ সাল থেকে পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ, বোদা, আটোয়ারী ও পঞ্চগড় সদর উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে আবাদি জমি, জনবসতিপূর্ণ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংলগ্ন এলাকায় গড়ে উঠছে অবৈধ ইটভাটা। একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী টাকার লোভে আবাদি জমি নষ্ট করে এসব অবৈধ ইটভাটা গড়ে তুলেছে।
উত্তর শান্তিনগর রাজার হাট এলাকার শান্তি রায় জানান, আবাদী জমি কেটে ইট বানানোর ফলে উর্বরতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে । আগে যে জমিতে বিঘায় ২০ মন ধান হতো এখন সেই জমিতে ধান হচ্ছে মাত্র ১০ মন। জমিকেটে খাল করার জন্য বর্ষাকালে পানি জমে থাকছে। বন্যার সৃষ্টি হচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন পঞ্চগড় জেলা শাখার আহ্বায়ক একেএম আনোয়ারুল খায়ের জানান, যত্র তত্র অপরিকল্পিত ভাবে ভাটা গড়ে উঠছে। পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। প্রশাসনের জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
পঞ্চগড় ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি আজহার আলী সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ভাটা বন্ধ হলে সরকারের উন্নয়ন কাজ কিভাবে চলবে। ভাটার মাধ্যমে মাত্র দশ শতাংশ বায়ু দুষণ হয়। এটি কোন দুষণ নয়। ইট ভাটা পরিবেশের খুব একটা ক্ষতি করছেনা।
মাত্র ১ কিলোমিটারের মধ্যে ৫-৭টি এবং ৩ কিলোমিটারের মধ্যে ৮-১০টি ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে। অধিকাংশেরই নেই কোনো অনুমোদন। আবহাওয়া ভালো থাকলে একেকটি ভাটা ৩ থেকে ৫ বার ইট উৎপাদন করে। প্রতিবার সাড়ে ৫ লাখ থেকে ৮ লাখ ইট তৈরি হয়। গত ১১ ফেব্রুয়ারী বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে ৬ টি ইটভাটাকে ৩১ লাখ টাকা জরিমানা করেন।
জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন জানান, পরিবেশের ক্ষতি করছে এমন অভিযোগ পেলে অভিযান অব্যাহত থাকবে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল