দেশের সর্বউত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবায় নিদারুণ সংকট চলছে। জেলার একমাত্র সদর আধুনিক হাসপাতালে আইসিইউ সুবিধা নেই। নেই অক্সিজেন প্লানটেশন। তাই গুরুতর রোগীরা দিনাজপুর অথবা রংপুরের হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে তাদের খরচ বেড়ে যাবার পাশাপাশি হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রকোপ এই জেলায় দিন দিন বাড়ছে । এ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৪১১ জন। গত জুন মাসে ২৩০ এবং চলমান জুলাই মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১৩০ জন । এদের মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন ৬ জন। দেশে প্রথম করোনা ভাইরাস শনাক্তের পর এই জেলায় প্রথম ঢেউয়ে আক্রান্ত হন ৭৭৯ জন। এদের মধ্যে মৃত্যুবরণ করেন ২০ জন। বর্তমানে ৩০৮ জন করোনা আক্রান্ত রোগী আইসোলেশনে রয়েছেন। হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৮ জন রোগী। চিকিৎসাসেবা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৯৭ জন রোগী। জানাগেছে বর্তমানে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ জন রোগীর সেম্পল নেয়া হচ্ছে। এদের মধ্যে করোনা পজেটিভ আক্রান্তদের হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে। আইসিইউ এবং পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ না থাকায় জটিল আকার ধারণ করা রোগীদের পাঠানো হচ্ছে রংপুর অথবা দিনাজপুরে।
জানা গেছে, কোভিড ভাইরাস ফুসফুসে ছড়িয়ে পড়লেই রোগীদের বাইরে পাঠানো হচ্ছে। এ কারণে আক্রান্ত রোগীদের ব্যয় বাড়ছে। একদিকে কোভিট আক্রান্তের ফলে পারিবারিক দুশ্চিন্তা অন্যদিকে চিকিৎসার জন্য বিপুল পরিমান অর্থ ব্যয়ের কারণে অনেকেই হতাশ হয়ে পড়ছেন। অনেকে তাই করোনা টেষ্ট করাতে চান না। গোপন রেখেই চলাফেরা করছেন।
আটোয়ারী উপজেলার কাটালী গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমান জানান, গত মাসের শেষের দিকে করোনা টেষ্টে তিনি পজেটিভ হন। পঞ্চগড় সদর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। আইসিইউ না থাকার কারণে ফুসফুস আক্রান্ত হলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে দিনাজপুরে চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ দেন। কারণ হাসপাতাল কতৃপক্ষ ঝুঁকি নিতে চান না। তিনি জানান দিনাজপুরে চিকিৎসা নেয়ার কারণে তার বিপুল পরিমান অর্থ ব্যয় হয়েছে। পঞ্চগড় হাসপাতালে আইসিইউ থাকলে এতোটাকা ব্যয় হতো না।
এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন ডা. মো ফজলুর রহমান জানান, আইসিইউ নির্মাণ অনেক সময়ের ব্যাপার। তাছাড়া করোনা রোগীর প্রধান সমস্যা অক্সিজেন, সেই অক্সিজেন সমস্যা সমাধানের জন্য ইতিমধ্যে একটি সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট বসানো হচ্ছে। এটি নির্মাণাধীন। আগামী এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে এই প্লান্ট এর কাজ শেষ হবে। অক্সিজেন প্লান্ট বসানো হলে ৬ থেকে ১০ হাজার লিটার অক্সিজেন কন্টেইনার বসানো হবে। এতে ২০ জন রোগীকে অক্সিজেন সেবা দেয়া যাবে।
এদিকে জুন মাসের ২৪ তারিখ থেকে পুনরায় করোনা টিকা সিনোফার্ম দেওয়া শুরু করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এবারে তিন ক্যাটাগরিতে শিক্ষার্থী, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং প্রবাসীদের টিকা প্রদান করা হচ্ছে। এরই মধ্যে ২৩১ জনকে টিকা প্রদান করা হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল