বাড়ির পাশে মেলায় সকাল থেকে নারী ও শিশুদের ভিড়। পুরুষরা মেলার ভিতরে যাচ্ছে না। যাচ্ছে কেবল নারীরা। দুই একজন তরুণদের দেখা গেলেও তাতেও বাধ সাধছে আয়োজক কমিটি। কোথাও পা ফেলার জায়গা নেই। নারী আর শিশুদের পদচারণায় উৎসবমুখর হয়ে কেনাকাটা করছে। নারীরা কেনাকাটা করছে বলে মেলার নাম দিয়েছে বউমেলা।
মহিলারা মেলায় ভিড় করে। তারা নিজেদের পছন্দের কসমেটিক্স, চুড়ি, ফিতা, দুল, নাকের নলক কিনে নেয়। মেলার বেশির ভাগ বিক্রেতারাও মহিলা। তাই ক্রেতা বিক্রেতারা স্বাছন্দে মেলায় কেনাকাটা করেন।
জানা যায়, বগুড়ার গাবতলী উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নের পোড়াদহ নামক স্থানে প্রায় ৪ শ’বছর আগে সন্যাসীর মেলা শুরু হয়। তখন থেকে বিচিত্র ধরনের মাছ, মিষ্টির সমাহার ঘটে। এ ছাড়া মেলায় কাঠের ফার্ণিচার বেচাকেনা হয়। ফাল্গুন মাসের প্রথম বুধবার অথবা মাঘ মাসের শেষ বুধবার মেলা বসে। মেলাটি একদিনের হলেও তা তিনদিন পর্যন্ত চলে। বুধবার মূল মেলার পরদিন বৃহস্পতিবার সকাল থেকে একই ইউনিয়নের ত্রিমোহনী নামক স্থানে বউ মেলার আয়োজন করা হয়।
এলাকায় রেওয়াজ বা রীতি প্রচলিত রয়েছে যে, সারা বছর এলাকার মেয়ে জামাইকে দাওয়াত না দিলেও এ মেলার সময় অবশ্যই মেয়ে জামাইকে দাওয়াত করতে হবে। তা না হলে পারিবারিক কলহ লেগে যায়। তাই মেলা উপলক্ষ্যে নিমন্ত্রণে আসা নারীরা পরের দিনে মেলায় কেনাকাটা করতে যায়। প্রথম দিনে পুরুষদের ভিড় দ্বিতীয় দিনে নারী ও শিশুদের ভিড়। মেলার মধ্যে পুরুষদের ভিড় না থকায় নারীরা ইচ্ছেমত মেলায় ঘুরতে পারে ও কেনাকাটা করতে পারে। অবশ্য এই মেলা গত ২০ বছরের বেশি সময় ধরে চলে আসছে। বউ মেলায় নারী শিশুদের প্রবাশাধিকার থাকলেও পুরুষদের জন্য রয়েছে নানা বিধি নিষেধ। তবে এলাকায় নারীদের প্রয়োজনীয় বেশিরভাগই কেনাবেচা হয়ে থাকে। রযেছে বিভিন্ন পদের খাবার ও শিশুদের জন্য রয়েছে খেলনা। চরকী, নাগরদোলা, মোটরসাইকেল খেলাসহ বিভিন্ন কিছু মেলা বসেছে।
বউমেলার কেনাকাটা করতে আসা আসমা বেগম জানান, প্রথম দিনে প্রচুর পুরুষ মানুষের সমাগম থাকায় ঠিকমত কেনাকাটা করা যায় না। বউমেলার দিন আয়োজক কমিটি থেকে বিধি নিষেধ করা হয়। সে কারণে নারীরাই এ মেলাতে ইচ্ছেমত কেনাকাটা করতে পারে। বউমেলার দিনে দরদাম করে কেনাকাটা করা যায়।
পোড়াদহ মেলা এই এলাকার শত বছরের ঐতিহ্য। এই মেলার পরের দিন নারীদের জন্য মেলা বসে। স্থানীয়রা এ মেলার নাম দিয়েছে বউমেলা।
বিডি প্রতিদিন/এএম