প্রেমিক যুগলকে একসাথে দেখে প্রেমিকার মাকে জানিয়ে দেয়ার কারণে ৯ বছরের শিশু লিজাকে হত্যা করে ঘাতকরা। শ্বাসরোধে হত্যার পর তার লাশ বাঁশের ঝোপে ফেলে রাখা হয়। আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এমন লোমহর্ষক তথ্য দেয় দুই ঘাতক।
বৃহস্পতিবার নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান হবিগঞ্জ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পুলিশ সুপার মো. আল মামুন শিকদার।
তিনি জানান, গত বছরের ২১ জুলাই ঈদুল আযহার দিন সন্ধ্যায় মাধবপুর উপজেলার গন্ধবপুর গ্রামের মো. সাগর আলীর মেয়ে লিজা আক্তারকে তার মা সেলিনা বেগম প্রয়োজনীয় কিছু দ্রব্য সামগ্রী আনতে গ্রামের পার্শ্ববর্তী বাজারে পাঠান। কিন্তু রাত হয়ে গেলেও সে ফিরে আসেনি। বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান পায়নি পরিবার। পরে ওইদিন রাতেই শিশু লিজার বাবা সাগর আলী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। নিখোঁজের চারদিন পর গ্রামের পার্শ্ববর্তী বাঁশের ঝোপে লাকড়ি কুড়াতে গিয়ে লিজার অর্ধগলিত মরদেহ দেখতে পান এক নারী।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার করে। রাতে লিজার বাবা সাগর আলী অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মাধবপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই। পরে পিবিআইয়ের সদস্যরা তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে গত ৭ ও ৯ ফেব্রুয়ারি অভিযান চালিয়ে একই গ্রামের বাহার উদ্দিন, খাদিজা আক্তার তাজরীন ও আমেনা খাতুনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবদ করে। পুলিশের জিজ্ঞাসবাদে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা প্রাথমিকভাবে স্বীকার করে তারা। পরে বুধবার আসামিদের আদালতে হাজির করলে বাহার ও তাজরীন হবিগঞ্জের সিনিয়র চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ঝুমুর সরকারের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
আসামিরা আদালতকে জানায়, গ্রেফতার তাজরীনের ছোটভাই তাকবীর হাসানের সাথে প্রতিবেশী কিশোরী শান্তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সেই সুবাধে তারা দু’জনে প্রায়ই দেখা সাক্ষাৎ করতো। হত্যাকাণ্ডের কয়েকদিন আগে সন্ধ্যায় শান্তা ও তাকবীর দেখা করার সময় শিশু লিজা তাদেরকে একসাথে দেখে ফেলে। বিষয়টি সে শান্তার মাকে জানিয়ে দেয়। এরপর শান্তার মা শান্তাকে গালি-গালাজ করেন। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও ছিনিয়ে নেন। এতে তাদের সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়। ক্ষোভে লিজাকে শায়েস্তা করার সুযোগ খোঁজতে থাকেন শান্তা ও তাকবির।
গত বছরের ২১ জুলাই ঈদুল আযহার দিন সন্ধ্যায় বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে লিজাকে চকলেটের লোভ দেখিয়ে একটি পরিত্যক্ত ঘরে নিয়ে যায় ঘাতকরা। এ সময় তারা লিজাকে গলা টিপে হত্যা করে বাঁশের ঝোপে ফেলে রাখে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন