চাঁদপুরে কৃষি জমির উর্বর মাটি ইটভাটায় চলে যাচ্ছে। ইটভাটার প্রধান উপকরণ এসব মাটি। ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি কেটে নেওয়ায় জমির উর্বরতা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। এতে ফসল উৎপাদন হ্রাসের পাশাপাশি কমছে চাষাবাদ। এমন অবস্থার দেখার যেন কেউ নেই।
ফরিদগঞ্জের কৃষক মফিজুর রহমান ও শাহারাস্তির কৃষক মোখলেছুর জানান, অনেক জমির মালিককে টাকার লোভ দেখিয়ে মাটি বিক্রিতে আকৃষ্ট করছে। সেক্ষেত্রে জমিতে ৮-১০ ফুট গভীর করে মাটি বিক্রি করায় পাশের জমির মাটি ভেঙে পড়ছে। ফলে ভেঙে যাওয়া ওইসব জমির মালিকরা বাধ্য হয়ে তাদের জমির মাটিও বিক্রি করে দিচ্ছেন। আমাদের কোনো কৃষক কিছু বললে হুমকি-ধামকির সম্মুখীন হতে হয়।
চাঁদপুর পরিবেশ অধিদপ্তরে প্রাপ্ত তথ্য মতে, জেলায় ১১০টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে বৈধ ৫৬টি ও অবৈধ ৫৪টি। ফরিদগঞ্জ ও শাহারাস্তি উপজেলাতেই বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে ৫০টি ইটভাটা রয়েছে। তাই এখানকার ইটভাটায় মাটি সরবরাহ ব্যবসায় একাধিক সিন্ডিকেট সক্রিয়। জড়িত ব্যক্তিরা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে অবাধে কৃষি জমির উপরিভাগের উর্বর মাটি কেটে ইটভাটায় সরবরাহ করছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে এক সময় মাটিও আমদানি নির্ভর হয়ে পড়বে।
চাঁদপুর সদরে ১৯টি, ফরিদগঞ্জে ২৬টি, হাজীগঞ্জে ১২টি, কচুয়ায় ৯টি, শাহারাস্তিতে ২৪টি, মতলব উত্তরে ১৩টি, মতলব দক্ষিণে ৪টি ও হাইমচরে ৩টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে সদরে ১১টি, ফরিদগঞ্জে ১৮টি, হাজীগঞ্জে ৪টি, কচুয়ায় ৩টি, শাহারাস্তিতে ১১টি, মতলব উত্তরে ২টি ও হাইমচরে ১টি ইটভাটার বৈধ কোনো কাগজপত্র নেই। ভাটার এসব ইট পোড়াতে কয়লার পরিবর্তে অবাধে দেশীয় কাঠ ও নিষিদ্ধ টায়ার-পোড়া মোবিল ব্যবহার হচ্ছে। এমনকি ভাটাগুলো কৃষি জমির আশপাশে স্থাপিত হওয়ায় ধোঁয়া ও উড়ন্ত ছাই কৃষি জমির ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করছে। এমনকি বিভিন্ন গাছের পাতা লাল হয়ে ক্রমেই গাছগুলো মরে যাচ্ছে। এতে করে প্রাকৃতিক পরিবেশের চরম বিপর্যয় ঘটছে।
চাঁদপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. হান্নান বলেন, ২০১০ সাল পর্যন্ত ইটভাটায় ড্রাম চিমনী ব্যবহার করা হতো। পরে ১২০ ফুট উচ্চতার চিমনী এবং ২০১৩ সালের পর জিকজ্যাক ইটভাটা করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়। এমনকি ইটভাটার এক কিলোমিটারে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আবাসিক এলাকা থাকা যাবে না এবং পৌরসভার প্রান্ত সীমানা হতে এক কিলোমিটার দূরে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে। এই আইন করার ফলে এখন জেলার বেশির ভাগ ইটভাটা অবৈধ হয়ে গেছে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই