নেত্রকোনা জেলার হাওরাঞ্চল খালিয়াজুরীতে ফসল বাঁচাতে দিনভর বাঁধ মেরামত করছেন। কিন্তু পরদিন সকালেই আবার ফাটল ধরছে। গেল কদিন ধরে উপজেলার সদর ও চাকুয়া কীর্ত্তণখোলা ফসল রক্ষা বেরিবাঁধে ঘটছে এমন সাপলুডু খেলার মতো ঘটনা।
মঙ্গলবার দিনভর বাঁধ মেরামত শেষে বুধবার সকালে এসে দেখেন আবারও বাঁধে ফাটল। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, বাঁধের জায়গাটি বিলের গভীরতায় পড়ার কারণে এমন হচ্ছে। স্থানীয় পিআইসি প্রধান উপজেলা প্রশাসন বলছে, সকলের সহযোগিতায় এখন পর্যন্ত বাঁধের ভেতরের ফসল রক্ষা করা যাচ্ছে।
সরেজমিন ঘুরে বুধবার দেখা গেছে, জেলার খালিয়াজুরী উপজেলা একটি হাওর দ্বীপ। এখানকার সকল মানুষ কৃষক। তাদের একমাত্র সম্বল এই বোরো ধান এবং মাছ। এগুলোর ওপরই নির্ভরশীল হাওরাঞ্চলের মধ্যে দ্বীপের মতো পুরো উপজেলা খালিয়াজুরীর মানুষ।
প্রতিবছর তাদের একমাত্র ফসল রোপণের পূর্বে থেকে সরকার বেরিবাঁধের জন্য কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দেন। আর এগুলোর মনিটরিং করেন স্থানীয় প্রশাসনসহ সরকার দলীয় নেতৃবৃন্দ। বরাদ্দ নিয়ে পিআইসির মাধ্যমে কাজ করা হয়। কিন্তু কাজ নিয়ে নানা অভিযোগের সীমা থাকে না। তারপরও কৃষকরা ভাবেন যাই করে দিয়েছে ফসল তো বাঁচবে। কিন্তু প্রতিবছর পাহাড়ি ঢল বা আকস্মিক বন্যার ভয়ে আতঙ্কে থাকেন তারা। এসবের মাঝে কোনো কোনো বছর পুরো ধান তুলতে পারেন এ অঞ্চলের কৃষক। আবার বেশির ভাগ বছরই কম বেশি পানিতে তলিয়ে যায় চোখের সামনে এই কষ্টের ফসল। এ বছরও ধান পাকতে আরো ১৫ থেকে ২০ দিনের মতো সময় বাকি থাকলেও ভারতের পাহাড়ি ঢল যেন থামছেই না।
ঢলের পানিতে উপজেলার প্রধান ধনু নদের পানি বেড়ে যায় হঠাৎ-ই। এতে নদী তীরের বিস্তীর্ণ ফসল সবজি ঘেরসহ পানিতে নিমজ্জিত হয়। আর এই পানির চাপ পড়েছে হাওরের বাঁধগুলোতে। সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে পড়েছে কীর্ত্তণখোলা বেড়ি বাঁধের কিছু অংশ। গত চার থেকে পাঁচ দিন ধরে টানা বাঁধ মেরামতে দিন কাটছে স্থানীয় ও কৃষকদের। নাওয়া-খাওয়া ভুলে বাড়িঘর রেখে তারা হাওরেই থাকছেন বাঁধ পাহাড়ায়। এবার তাদের সাথে রয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ স্থানীয় প্রশাসনও।
গত শনিবার থেকে হাওরের সাত কিলোমিটার বেরিবাঁধের নাজুক কিছু পয়েন্টে ফাটল দেখা দিয়েছে। এগুলো বন্ধে চেষ্টা করছেন কৃষকরা। স্বেচ্ছাশ্রমে তারা মাটি কেটে বাঁশ চাটাই দিয়ে কোনো রকমে ফাটল বন্ধ করছেন। আবার পরদিন সকালে তা পানির চাপে ফেটে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পিআইসি সভাপতি বলেন, পানির দুই সাইডের যে ব্যবধানের জন্য চাপে বাঁধের ভেতরে ফেটে যাচ্ছে। এই বাঁধটি গভীরে হওয়ায় আমাদের একটু কষ্ট হচ্ছে। আমাদের যে যে জায়গাগুলো ভার্নারেবল সেগুলোকে আটকাচ্ছি। আমাদের উপজেলা কমিটির মাধ্যমে যাচাইবাছাই করে এই কাজগুলো দেওয়া হয়েছিল। এখন যে অভিযোগগুলো আসছে, আমরা এগুলো খতিয়ে দেখবো। ৮৮টি পিআইসির বাঁধের কাজ ভালো হয়েছে। শুধুমাত্র ৪ থেকে ৫টি বাঁধে এমন অবস্থা হয়েছে। তবে এই কীর্ত্তণখোলা বাঁধটি আগে থেকেই ঝুঁকিপূর্ণ। যতবার হাওরে পানি এসেছে ততবার এই বাঁধ ভেঙেই এসেেছ।
অন্যদিকে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহন লাল সৈকত জানান, প্রতিদিন রাত পর্যন্ত মেরামত শেষে পরদিন ফাটল হচ্ছে। তবে মঙ্গলবারের চেয়ে বুধবার ধনু নদের পানি তিন সেন্টিমিটার কমেছে। যে কারেণ ডেঞ্জার লেভেলের চেয়ে ৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে যাচ্ছে। এভাবে থাকলে ফসল তোলা যাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি। তিনি বলেন, খালিয়াজুরীতে ৮৮টি পিআইসির মাধ্যমে প্রায় ৮১টি কিলোমিটার বাঁধের জন্য মোট বাজেট ছিল ১৬ কোটি টাকা। এই কীর্ত্তণখোলাতে দুইটি ফোল্ডারে চারটি পিআইসির মাধ্যমে প্রায় ৭০ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই