২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউ-এ অনুষ্ঠিত শেখ হাসিনার সমাবেশে বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলায় মাদারীপুরের ৪ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে বেশ কয়েকজন। আহতদের একজন রামকৃষ্ণ মন্ডল। মাদারীপুর সদর উপজেলা ছিলারচর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি পেশায় একজন কাঠ মিস্ত্রী।
ঘটনার দিন তিনি শেখ হাসিনার ভাষণ শুনতে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে উপস্থিত হন। এক পর্যায় গ্রেনেড হামলায় অনেকের সাথে তিনিও আহত হন। তাকে ভর্তি করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। পরে সেখান থেকে পাঠানো হয় সরোয়ার্দী হাসপাতালে। দীর্ঘদিন সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন। এক চোখ নষ্ট হয়ে হয়ে যায় গ্রেনেডের আঘাতে। তিনি জানান, হাসপাতালে আমি অসুস্থ হয়ে ভর্তি হয়েছিলাম চিকিৎসার জন্য কিন্তু প্রতিদিন পুলিশ এসে আমাকে জেরা করতো। আমি কোন পার্টি করি, কেন ওখানে গিয়েছি? এমন নানা ধরনের প্রশ্ন করে। আমাকে হুমকি ধামকি দেয়। আমি তখন বলতেও পরিনি আমি আওয়ামী লীগ করি। সেই হামলায় আমার একটি চোখ নষ্ট হয়ে যায়। নিজের খরচেই চিকিৎসা করাই। কেউ আমাকে এক পয়সাও সহযোগিতা করেনি। এখনও কষ্ট করে মিস্ত্রীর কাজ করে আমার সংসার চালাই। চোখ নষ্ট হওয়ার কারণে ঠিকমত কাজও করতে পারি না। আমি যেহেতু শেখ হাসিনার মিটিংএ গিয়ে চোখ হারিয়েছি তাই দাবি করছি শেখ হাসিনা যেন আমার চিকিৎসার দায়িত্ব নেয়।
জানা গেছে, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় মাদারীপুরের নিহত ৪ জন হলেন রাজৈর উপজেলার হোসেনপুর ইউনিয়নের চানপট্টি গ্রামের যুবলীগ নেতা নিহত লিটন মুন্সি, একই উপজেলার কদমবাড়ি ইউনিয়নের মহিষমারি গ্রামের সুফিয়া বেগম, কালকিনি উপজেলার কয়ারিয়া ইউনিয়নের রামারপোল গ্রামের নাছিরউদ্দিন ও ক্রোকিরচর গ্রামের যুবলীগ নেতা মোস্তাক আহাম্মেদ ওরফে কালা সেন্টু।
রাজৈর উপজেলার হোসেনপুর ইউনিয়নের চানপট্টি গ্রামের যুবলীগ নেতা নিহত লিটন মুন্সির বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল বৃদ্ধ বাবা আইয়ুব আলী মুন্সী ও মা আছিয়া বেগম ছেলের শোকে শোকাহত হয়ে আছে। ২১ আগস্ট ছেলের নিহতের কথা তারা কিছুতেই ভুলতে পারছেন না।
নিহত লিটন মুন্সির মা আছিয়া বেগম বলেন, একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে আজ আমরা বিভিন্ন ধরনের সমস্যার মধ্য দিয়ে দিন অতিবাহিত করছি। লিটনের বাবা ও আমি দুজনেই বয়স্ক মানুষ। আমরা প্রায় সময়ই অসুস্থ থাকি। লিটনের বাবা এখন কোন কাজ করতে পারে না। আমি অপারেশনের রোগী মাসে আমার ওষুধ লাগে ৫০৮০ টাকার। ভাতা পাই ৩ হাজার টাকা। খুবই কষ্টে দিন যাপন করছি। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাই তিনি যেন একবারের জন্য হলেও আমার ছেলের কবর জিয়ারত করে যান।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল