রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মচারি নামধারি একদল দালাল আস্তানা গেড়েছে। এই দালালের দল হাসপাতালের রোগী ও তাদের স্বজনদের খুবলে খুবলে খায়। তারা হাসপাতালের চিকিৎকদের বাদ দেন না বকশিশের নামে আর্থিক নির্যাতন করতে।
সম্প্রতি নিজের মাকে ভর্তি করাতে গিয়ে এই দালাল চক্রের হয়রানির শিকার হন এক চিকিৎসক। তার অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। একই সঙ্গে এ ঘটনায় হাসপাতালের দুই কর্মচারিকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত দুই কর্মচারি মাসুদ ও ঝর্না বেগমকে বরখাস্ত করা হয়। এছাড়াও হয়রানির পিছনে আর কেউ জড়িত আছে কিনা তা জানতে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে হাসপাতালের পরিচালক।
হৃদরোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হরিপদ সরকারকে প্রধান করে গঠন করা তদন্ত কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মোস্তফা জামান চৌধুরী এবং ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার ডা. আবুল হাসান। কমিটিকে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
হাসপাতালের অর্থোসার্জারি বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট এবিএম রাশেদুল আমীর অসুস্থ মাকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে গিয়ে বকশিশ সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে স্বজনসহ হয়রানির শিকার হন তিনি।
রাশেদুল আমীর অভিযোগ করেন, গত ১৭ সেপ্টেম্বর তার মা হৃদরোগে আক্রান্ত হলে হাসপাতালে ভর্তি করাতে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন স্বজনরা। জরুরি বিভাগে ভর্তির জন্য ২৫০ টাকা দাবি করা হয়। পরে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মা পরিচয় জানতে পেরে তারা ৫০ টাকা ভর্তি বাবদ নেন। যদিও হাসপাতালে নির্ধারিত ভর্তি ফি ২৫ টাকা এবং সরকারি কর্মকর্তার মা এবং অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তার স্ত্রী হিসেবে ভর্তি ফি না নেওয়ার কথা।
তিনি বলেন, ভর্তির পর আমার অসুস্থ মাকে সিসিইউতে নেওয়া হলে সেখানে জরুরি বিভাগে কর্মরত দু’জন জোরপূর্বক আমার ব্যক্তিগত সহকারীর কাছ থেকে ২০০ টাকা বকশিশ নেন। এ সময় তাদেরকে আমার নাম পরিচয় এবং রোগী সম্পর্কে জানানো হলে তারা বলে ‘যে স্যারের মা হোক, টাকা দিতে হবে’। পরবর্তীতে আমি রাতে আসার পর মায়ের শয্যা পাশে অবস্থানকালে সিসিইউতে কর্মরত ওয়ার্ড বয় পরিচয়ধারী মাসুদ আমার কাছে সরাসরি টাকা দাবি করে। এ সময় আমি সেই কথাবার্তার কিছু মুহূর্তের ভিডিও ধারণ করি।
এ ঘটনা আমার কাছে অত্যন্ত মানসিক পীড়াদায়ক এবং অপমানকর। যে প্রতিষ্ঠানে আমি সেবা দিয়ে যাচ্ছি, সেখানে আমি হয়রানির শিকার হচ্ছি তা সত্যিই দুঃখজনক। আমি নিজে হাসপাতালের একজন কর্মকর্তা হয়েও যদি হয়রানির শিকার হই, তাহলে সাধারণ মানুষের অবস্থা তো সহজেই অনুমেয়।
হয়রানি ও আর্থিক নির্যাতনের বিষয়ে রমেক হাসপাতালের পরিচালক বরাবর তিনি ১৮ সেপ্টেম্বর একটি লিখিত অভিযোগ দিলে দুই কর্মচারিকে বরখাস্ত ও তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
এ ব্যাপারে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. শরীফুল হাসান জানান, হয়রানির শিকার চিকিৎসকের অভিযোগের ভিত্তিতে দু’জন কর্মচারিকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন