কুষ্টিয়ায় খোকসায় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সাথে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মাঝে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এসময় ইটের আঘাতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সরকারি গাড়ির পিছনের গ্লাস ভেঙে যায়।
শনিবার (২৯ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৯ টার দিকে খোকসা পৌরবাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। সরকারি গাড়ি ভাংচুরের অপরাধে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়।
আগামী ২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত্ব এই উপ-নির্বাচনকে ঘিরে এখানে প্রতিদিনই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতি ও মারামারির ঘটনা ঘটছে। এ সব ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন খোকসা থানার ওসি সৈয়দ আশিকুর রহমান।
তিনি বলেন, বিকেলে ঘোড়া এবং নৌকা প্রার্থীর সমর্থকদের মাঝে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। রাতে উভয়পক্ষ পুনরায় সংঘর্ষে জড়ানোর পাঁয়তারা করে। তারা ইট-পাথর ছুড়াছুড়ি করে। এসময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিজ কার্যালয়ের দিকে যাচ্ছিলেন। যাওয়ার পথে পৌর বাজার এলাকায় তার (ইউএনও) সরকারি গাড়ির পিছনের গ্লাস ভেঙে দেওয়া হয়।
তিনি আরও জানান, ভেঙে যাওয়া গাড়িটি বর্তমানে থানায় রয়েছে। এ সংক্রান্ত মামলা প্রক্রিয়াধীন। ঘটনার পর থেকে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
খোকসা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রিপন বিশ্বাস বলেন, দুই পক্ষের উত্তেজনা শান্ত করে ফিরছিলাম। ফেরার পথে বাবুল আক্তার ও শান্তর মাঝামাঝি এলাকায় পৌঁছালে সরকারি গাড়ির পিছনে ইট লাগে। এতে পিছনের গ্লাস ভেঙে যায়। এ সংক্রান্ত মামলা চলমান রয়েছে। ভাঙা গাড়িটি বর্তমানে থানায় রয়েছে।
তবে রাতে পাল্টা ধাওয়া ও ইট নিক্ষেপের ঘটনা অস্বীকার করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মোতাহার হোসেন খোকন। তিনি বলেন, সন্ধ্যায় জানিপুর ইউনিয়নের একতারপুর হোটেল মোড়ে বাবুল আখতারের সমর্থক ও জানিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ সাবেক চেয়ারম্যানের ভাইকে হাতুড়িপেটা করেন। হয়তো সাবেক চেয়ারম্যানের লোকজন বাবুল আখতারের লোকজনের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে এ ঘটনা ঘটতে পারে। আমি বা আমার লোকজন ইউএনওর গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত নয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার বিকেলে আওয়ামী লীগের মনোনিত প্রার্থী বাবুল আখতার তাঁর কর্মী সমর্থকের নিয়ে গড়াই নদের ঘাট পার হয়ে ওসমানপুরে প্রচারণায় যাচ্ছিলেন। আর ঘোড়া প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোতাহার হোসেন খোকন তাঁর কর্মী-সমর্থক নিয়ে বাজার এলাকায় প্রচারণা করছিলেন। এসময় খেয়াঘাট এলাকায় দুইপক্ষের স্লোগান, বাক-বিতন্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থক দুলাল, তুষারসহ ৫ -৭ জন চাপা মারপিটের শিকার হন। পরে খবর পেয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
এ নিয়ে উভয় পক্ষের সমর্থক ও নেতাকর্মীদের মাঝে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছিল। উভয় পক্ষ সংঘর্ষের জড়ানোর প্রস্তুতি গ্রহণ করে। এরপর সন্ধায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর সমর্থক ও জানিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ ও তাঁর লোকজনের বিরুদ্ধে ওই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যানের ভাই শরিফুল ইসলাম শরিফকে (৪৫) হাতুড়ি পেটা করে। আহত ব্যক্তি জানিপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হবিবুর রহমানের ভাই ও কমলাপুর গ্রামের দেলবার হোসেনের ছেলে। তিনি খোকসা সরকারি কলেজের কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কর্মরত।
এ বিষয়ে জানতে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বাবুল আক্তারকে মুঠোফোনে কল দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি ফোনটি রিসিভ করেননি।
খোকসা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আল মাছুম মুর্শেদ শান্ত বলেন, রাতে নৌকা প্রার্থীর অফিস এলাকায় লোকজনের জমায়েত হওয়ার খবর শুনেছিলাম। আমি এবং আমার লোকজন আমার কার্যালয়ে ছিলাম। সেখানে কি হয়েছি তা জানিনা।
বিডি-প্রতিদিন/আ. তাফ