পড়াশোনা করে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার প্রবল আগ্রহ সত্বেও অভিভাবকরা সেই ইচ্ছার লাগাম টেনে নবম শ্রেণিতে থাকতেই বিয়ে ঠিক করেছিলো। আগামীকাল সোমবার ছিলো বিয়ের ধার্য দিন। রবিবার পুলিশকে ফোন করে নিজেই অভিভাবকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানোর পর অবশেষে বন্ধ হয়েছে তার বাল্যবিয়ে। অপরিণত বয়সে সংসারের দায় থেকে মুক্তি মিলেছে জয়ঝাপ উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী আয়েশার। ঘটনাটি ঘটেছে ফরিদপুরের সালথা উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের দরগা গট্টি গ্রামে।
সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ সাদিক জানান, মেয়েটি রবিবার সকালে আমাকে ফোন দিয়ে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বাল্যবিয়ের কথা জানায়। ছাত্রীটি জানায় সে পড়াশোনা করতে চায়। কিন্তু তার পিতামাতা ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে তাকে বিয়ে দিতে চাইছে। সোমবার ফরিদপুরের কোর্টে নিয়ে তার কাবিন সম্পন্ন করে বিয়ে দেয়া হবে। এই সংবাদ পেয়ে একজন সাব ইন্সপেক্টরকে মেয়েটির বাড়িতে পাঠাই।
ওই স্কুলছাত্রীর বাবা আতিক মাতুব্বর একজন ভূমিহীন কৃষক। নিজের বলতে এক টুকরো জমিও নেই। পরের বাড়িতে কামলা দিয়ে তার সংসার চলে। এক মেয়ে ও তিন ছেলে তার। এদের মধ্যে এই মেয়েটিই সবার বড়। সংসারের দায় কমাতে আর উঠতি বয়সী মেয়ের নিরাপত্তার কথা ভেবেই তিনি মেয়ের বিয়েতে রাজি হন।
আতিক মাতুব্বর বলেন, আমার নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়েকে দুই-তিন দিন আগে ছেলেপক্ষ দেখতে এসে তাদের পছন্দ হলে মেয়েকে নাকফুল পড়িয়ে যায়। তবে বিয়ের দিন তারিখ এখনও নির্ধারিত হয়নি। এ অবস্থায় রবিবার সকালে সালথা থানার ওসি আমাদের থানায় ডেকে বিয়ে বন্ধ করতে বলেন। আমরা তার বাল্য বিয়ে না দেওয়ার মুচলেকা দিয়ে আসি থানায়। দুপুরে ওসি সাহেব আমাদের বাড়িতে এসে আমার মেয়ের লেখাপড়ার দ্বায়িত্ব নিবেন বলে জানান। মেয়েটি পড়াশোনা করতে পারবে জেনে আমরাও খুশি।
জয়ঝাপ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান মিরাজ আলী বলেন, সালথা থানার ওসি মেয়েটাকে নিয়ে দুপুরে আমার স্কুলে আসেন। তিনি মেয়েটির বাল্য বিয়ে বন্ধের কথা জানান এবং তার পড়াশোনার যাবতীয় খরচ বহনের আশ্বাস দেন। পড়াশোনার প্রতি প্রবল আগ্রহী মেয়েটির উচ্চ শিক্ষার পথ সুগম করতে পারায় তিনি ওসি সাহেবের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
বাল্যবিয়ে ঠিক হওয়ার পরে নিজেই পুলিশকে ফোন করে বিয়ে বন্ধের ব্যাপারে মেয়েটি বলেন, আমার পড়াশোনা করার প্রচন্ড ইচ্ছা। আমি এখনই বিয়ে করতে চাই না। কিন্তু দারিদ্রতার কারণে অজ্ঞতাবশত বাবা-মা আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিয়ে ঠিক করেছিলো। এজন্য আমি ওসি স্যারকে ফোন করে বিয়ের কথা জানালে তিনি বিয়ে বন্ধ করে দেন। বিয়ে বন্ধের জন্য পুলিশকে ফোন দেয়ার কথা মনে এলো কেনো এ প্রশ্নের জবাবে মেয়েটি জানায়, তার বান্ধবীদের নিকট থেকে জেনে ফোন নম্বর জোগাড় করে সে ওসি সাহেবকে ফোন দিয়েছে।
সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ সাদিক বলেন, এখন থেকে মেয়েটির পড়াশোনার সমস্ত খরচের দায়িত্ব আমি নিয়েছি। আমি যখন এখান থেকে চলে যাবো তখন যিনি আসবেন তাকেও এই দ্বায়িত্ব দিয়ে যাবো এবং আমি নিজেও সবসময় ওর খোঁজখবর রাখবো।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল
