টাঙ্গাইলে ধারাবাহিকভাবে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশ মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দিয়ে হয়রানি করছে বলে দাবি করেছে জেলা বিএনপির। গত ২ সপ্তাহে জেলার বিভিন্ন থানায় পুলিশের দায়েরকৃত ১০টি মামলায় ২৫৩ জন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা আরো ৬ শতাধিককে আসামি করা হয়েছে। গ্রেফতারের পর রিমান্ড এবং কারাগারে পাঠানো হয়েছে ৫০ নেতাকর্মীকে।
বিএনপির নেতারা অভিযোগ করে বলেন, মিথ্যা অভিযোগ এনে নেতাকর্মীদের হয়রানি করার জন্য পুলিশ এসব “গায়েবি” মামলা দায়ের করছে। ঢাকায় আগামী ১০ ডিসেম্বর বিএনপির মহাসমাবেশকে বাধাগ্রস্ত করতেই এ মামলা। তারা গ্রেফতার আতঙ্কে ঘরে থাকতে পারছেন না।
তবে বিএনপি নেতাদের এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে জেলা পুলিশ। তাদের দাবি, নাশকতা সৃষ্টির প্রস্তুতিসহ সুনির্দিষ্ট অভিযোগে এসব মামলা দায়ের এবং গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলাগুলোর তদন্ত চলছে।
জানা যায়, বাসাইলে থানার উপ-পরিদর্শক টিটু চৌধুরী বাদী হয়ে ১৬ জনের নামসহ অজ্ঞাত ৪০/৫০ জনকে আসামি করে ২৪ নভেম্বর মামলা দায়ের করেন। বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় তাদের বিরুদ্ধে পুলিশের প্রতি ককটেল নিক্ষেপের অভিযোগ আনা হয়। মামলায় ৩ জনকে দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
গত ২৩ নভেম্বর মির্জাপুর থানার উপ-পরিদর্শক মোশারফ হোসেন বাদী হয়ে ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে বিস্ফারক আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের ৬ নেতার বিরুদ্ধে বিস্ফারক আইনে অভিযোগ আনা হয়। পরে ৬ নেতার দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
২২ নভেম্বর ঘাটাইলে পুলিশের উপর ককটেল হামলার অভিযোগে বিএনপির ৩৫ জনের নামসহ ৪০/৫০ জন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। ২ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর হওয়া ১০ জন নেতাকর্মী পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন।
২১ নভেম্বর টাঙ্গাইল শহরে বিএনপির প্রস্তুতি সভা থেকে ফেরার পথে ৩ জন আইনজীবীসহ ১২ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করে। ওই রাতেই তাদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে ৩১ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। পরদিন আদালতে হাজির করে রিমান্ড চাওয়া হয়। আদালত একদিন করে ১২ জনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
২১ নভেম্বর নাগরপুর উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ২ জনকে এবং ১৭ নভেম্বর কালিহাতী উপজেলার ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধেও পুলিশ বাদী হয়ে বিস্ফারক আইনে মামলা দায়ের করে। আসামিদের বিরুদ্ধে পুলিশের প্রতি ককটেল নিক্ষেপের অভিযোগ আনা হয়। কালিহাতীর মামলায় ২৯ জনের নামসহ ৩০/৪০ জন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। নাগরপুরের মামলায় ২১ জনের নামসহ ৪০/৫০ জন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়।
২৯ নভেস্বর দেলদুয়ারে বিএনপির ২০ নেতাকর্মীর নামে মামলা হয়েছে। পরে গ্রেফতারকৃত ২ জনকে ১ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
৩০ নভেম্বর রাতে সখীপুর উপজেলায় ৩৮ জনের নাম উল্লেখসহ মোট ৮৮ জন বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন থানার উপ-পরিদর্শক মোহাম্মদ আলী। সেদিন রাতেই উপজেলা বিএনপি, কৃষক দল এবং যুবদলের ৪ নেতাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
১ ডিসেম্বর গোপালপুরে ২০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত ৫ জনকে ১ দিন করে রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। একই দিন ভূঞাপুরে ১৬ জনের নামে মামলা দিয়েছে পুলিশ।গ্রেফতারকৃত ১ জনকে ১ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।
মামলাগুলো দায়েরের পর এলাকার বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। নেতাকর্মীরা জানান, যাদের নাম মামলায় রয়েছে তারা গ্রেফতার এড়াতে এলাকা ছেড়েছেন। অন্যরা গ্রেফতার আতঙ্কে ভুগছেন। প্রতিটি মামলায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। যে কাউকে এই মামলায় গ্রেফতার করার সুযোগ রয়েছে।
সখীপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান সাজু জানান, আসলে কোনো ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাই ঘটেনি। গ্রেফতার হওয়ার সময় নেতাকর্মীরা স্থানীয় একটি ক্লাবে বসে টিভিতে বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা দেখছিলেন।
টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রদলের সভাপতি দুর্জয় হোড় শুভ জানান, ওয়ারেন্ট ছাড়াই ছাত্রদলের কয়েকজন নেতাকে আটক করে গায়েবি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়েছে পুলিশ। নেতাদের খুঁজতে রাতে বাসায় বাসায় অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফরহাদ ইকবাল বলেন, আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ বাধাগ্রস্ত করতেই পুলিশ ধারাবাহিকভাবে মিথ্যা গায়েবি মামলা দায়ের করছে। দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের জন্য বাড়ি ঘরে হানা দিচ্ছে। পুলিশের প্রতি ককটেল নিক্ষেপের অভিযোগ আনা হয়েছে। অথচ কোথাও কোন ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেনি। কাউকে বাড়ি থেকে, কাউকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা রাস্তা থেকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। মামলার কোন সত্যতা নেই। অবিলম্বে মামলাগুলো প্রত্যাহার করে গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি দেওয়া প্রয়োজন। শত বাধা সত্বেও টাঙ্গাইল জেলা থেকে বিএনপির ২০/২৫ হাজার নেতাকর্মী ঢাকার মহাসমাবেশে যোগ দিবে আশা করছি।
টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) শরফুদ্দীন বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা নাশকতার উদ্দেশ্যে জমায়েত হয়। ককটেলও উদ্ধার করা হয়েছে। দায়েরকৃত মামলাগুলোর তদন্ত চলছে। এখন মন্তব্য করা সঠিক হবে না।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত