কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার যদুবয়রা ইউনিয়নের উত্তর চাঁদপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং ওই গ্রামের কয়েকটা বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ওইসব ঘটনার প্রতিবাদে সড়কে বাঁশ বেঁধে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন গ্রামবাসী।
আজ মঙ্গলবার বেলা ১১ টায় উপজেলার লাহিনীপাড়া টু সান্দিয়ারা সড়কের চাঁদপুর বাজার এলাকায় ঘণ্টাব্যাপী দাঁড়িয়ে মানববন্ধন করেন তারা।
মানববন্ধন পরবর্তী সমাবেশে ১ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. তৌহিদুল ইসলাম মাস্টারের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আজিজুল হক, আওয়ামী লীগ নেতা কামরুজ্জামান সাবু, উত্তর চাঁদপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি আলমগীর হোসেন, ইউপি সদস্য আনিসুর রহমান।এসময় বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ কয়েক হাজার গ্রামবাসী উপস্থিত ছিলেন। পরে তাঁরা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন।
মানববন্ধন পরবর্তী সমাবেশে বক্তারা বলেন, ' প্রথমে ভোট বন্ধ করার জন্য প্রতিপক্ষরা বিদ্যালয়ের ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়। আর ভোটে পরাজয়ের পর প্রতিপক্ষের লোকজন নিজেদের ঘরবাড়িতে আগুন লাগিয়ে এলাকার শান্তি নষ্ট করছে।’ তারা আগুনের লাগানোর ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
সভাপতির বক্তব্য আওয়ামী লীগ নেতা তৌহিদুল ইসলাম মাস্টার বলেন, তার প্রতিপক্ষ যদুবয়রা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান ও ছাত্রলীগ নেতা আকাশ রেজার নেতৃত্বে বিদ্যালয় ও গ্রামে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। তার ভাষ্য, প্রথমে ভোট বন্ধ করতে এবং পরে ভোটে হেরে এলাকার শান্তি নষ্ট করতে তারা এমন জঘন্য কাজ করেছেন। তিনি দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদ নির্বাচনে যদুবয়রা ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. তৌহিদুল ইসলাম একটি প্যানেল দিয়েছেন। তার প্রতিপক্ষ প্যানেল ছিলো ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সবুজ আলী ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি আকাশ রেজার। কিন্তু আকাশ রেজার প্যানেল ভোটের আগের ভোট বর্জন ঘোষণা করেন। ভোটে তৌহিদুল প্যানেল বিজয় লাভ করেন।
অভিযোগ অস্বীকার করে যদুবয়রা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান বলেন, ভুয়া কাগজপত্রাদির মাধ্যমে নিয়োগ বাণিজ্যসহ বিদ্যালয়ে নানা অনিয়ম রয়েছে। সকল অনিয়ম ঢাকতে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং বর্তমান ও সাবেক সভাপতি আগুন লাগানোর নাটক সাজিয়েছেন। তিনি প্রকৃত দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
পুলিশ জানায়, ভোটকে কেন্দ্র করে গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত একটার দিকে বিদ্যালয়ের আধাপাকা ঘরে আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটে। আগুনে ভবনের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের কক্ষ এবং সেখানে থাকা শিক্ষার্থীদের সনদ, বই গুরুত্বপূর্ণ কাগজ ও আসবাবপত্রসহ দুইটি কক্ষের সবকিছু পুড়ে ছাই গেছে। এরপর গত রবিবার রাতে গ্রামের রিয়াজ উদ্দিনের ছেলে আমিরুল ইসলামের গোয়াল ঘরে আগুন লাগে। গত সোমবার ভোরে আমিরুলের ভাই কামিরুল ইসলামের গোয়ালঘরে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। এতে তিনটি গরু আগুনে পুড়ে যায়। এছাড়াও সোমবার রাত আটটার দিকে গ্রামের মৃত আতাই শেখের ছেলে খাইরুল ইসলামের গোয়ালঘর ও রান্নাঘর আগুনে পুড়ে ছাই হয় গেছে। তবে কি কারণে আগুনের সূত্রপাত তা এখনো জানা যায়নি।
কুমারখালী থানার ওসি মো. মোহসীন হোসাইন বলেন, সড়ক অবরোধ করে নয়, বিদ্যালয়ের মাঠে মানববন্ধন করার কথা ছিল। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল। তার ভাষ্য, এক পক্ষ অপরপক্ষকে ফাঁসানোর জন্য ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটাচ্ছে। পুলিশ রহস্য উদঘাটনে কাজ করছে। তবে বিদ্যালয়ে আগুনের ঘটনায় এখনো থানায় মামলা হয়নি।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল