২৯ মে, ২০২৩ ১৪:১৭

জঙ্গলের খুপরিতে সাপ-ইঁদুরের সাথে ১৭ বছর বসবাস!

মহিউদ্দিন মোল্লা,কুমিল্লা

জঙ্গলের খুপরিতে সাপ-ইঁদুরের সাথে ১৭ বছর বসবাস!

চোখের চিকিৎসার জন্য নগদ অর্থ তুলে দেন দেবিদ্বার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান

১৭ বছর ধরে জঙ্গলে খুপরিতে ছিলেন। শিয়াল, সাপ, ইঁদুর ও বিচ্ছুর সাথে অর্ধাহার- অনাহারে কেটেছে সময়। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করেছেন মুজিবুর রহমান (৬০)। 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ঘটনা প্রকাশের পর ঘটনাস্থলে যান কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। তারা চিরকুমার মুজিবুর রহমানের মানবেতর জীবনযাপনের গল্প শোনেন। দেবিদ্বার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ তার পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। 

রবিবার কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার ১০নং গুনাইঘর দক্ষিণ ইউনিয়নের মাশিকাড়া গ্রামের উত্তরপাড়া মৌলভি বাড়ির পাশে একটি জঙ্গলে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, নির্বাহী কর্মকর্তা মুজিবুর রহমানকে দেখতে যান। জঙ্গলের মাঝে বাঁশঝাড় পেরিয়ে দেখা যায় পলিথিনে মোড়ানো ছাউনির একটি ছোট খুপরিতে বসে আছেন ৬০ বছর বয়সী চিরকুমার মুজিবুর রহমান।  প্রশাসনের লোকজন আসার খবরে বেরিয়ে আসেন খুপরি থেকে। বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে কান্নাজড়িত কণ্ঠে খুপরিতে বসবাসের গল্প শোনান মুজিবুর। তার গল্প শুনে অশ্রুসিক্ত হন সবাই।

অর্থ-বিত্তে সাজানো সংসার ছিল। কিন্তু সৎ-ভাইদের রোষানলে পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হয়ে জঙ্গলে ঠাঁই  হয় তার। জঙ্গলের খুপরিতে থাকায় বিয়েটাও করতে পারেননি তিনি।

মুজিবুর রহমান জানান, মরহুম লাল মিয়া প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর তার মাকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। এই সংসারে মায়ের একমাত্র সন্তান ছিলেন তিনি। প্রথম সংসারে দুই ভাই ফরিদুল ইসলাম ও জহিরুল ইসলাম। 

মুজিবুর রহমানের বাবা লাল মিয়া রেলওয়েতে চাকরি করতেন। সৎ ভাই ফরিদুল আলম পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে চাকরি করতেন। মুজিবুর কাঁচপুর মালেক জুট মিলে চাকরি করে সৎ ভাই জহিরুল ইসলামকে বিএ পাশ করান। সেই জহিরুল ইসলামই তার পৈত্রিক সম্পত্তির ১০৫ শতাংশ জমির মধ্যে ৮৫ শতাংশ জমি লিখে নেন। তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। 

স্থানীয়দের সহযোগিতায় ২০০৭ সাল থেকে জঙ্গলে খুপরি বানিয়ে ঠাঁই নেন। মিলের চাকরি ছেড়ে বাড়িতে-বাড়িতে ইলেকট্রিক লাইনের কাজ শুরু করেন। তার বাম চোখটি নষ্ট হয় গেছে। বয়স হয়েছে তাই কাজে নিতে চায় না কেউ। অর্ধাহার-অনাহারে, রোদ, ঝড়-বাদলে, শেয়ালের হাঁক-ডাকের মাঝেই খুপরির মধ্যেই থাকেন। কখনও লাকড়ির চুলায় ভাত আর আলু সেদ্ধ করে লবণ-মরিচ দিয়ে খেতেন। কখনও শুকনা খাবার খেয়ে থাকেন। তিনি দুঃখ করে বলেন, শিয়াল-সাপ-বিচ্ছু-মশা আমার ক্ষতি করেনি যে ক্ষতি করেছে মানুষ।

এ বিষয়ে জানতে মুজিবুরের ভাই জহিরুলকে পাওয়া যায়নি। জহিরুলের বড় ভাই ফরিদুল আলমের ছেলে আল-আমিন জানান, আমার কাকা অভিমানী। আমার দাদার জায়গা-জমি ভাগ হয়নি এখনও। তবে চাচা কিছু জমি নিজ নামে লিখে নিয়েছেন। চাচার পাওনা বুঝিয়ে দিতে আমাদের আপত্তি নেই। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিগার সুলতানা জানান, মজিবুর রহমানকে তার পিতার জমির কাগজপত্র নিয়ে এসিল্যান্ডের সাথে দেখা করার জন্য বলা হয়েছে। কাগজপত্র ঠিক থাকলে তার পাওনা জমি তাকে উদ্ধার করে দেওয়া হবে। না হয় আবাসনের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও কুমিল্লা (উত্তর) জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আবুল কালাম আজাদ তাৎক্ষণিক চক্ষু চিকিৎসার জন্য ১০ হাজার টাকা প্রদান করেন। সচ্ছলতা আনয়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণেরও আশ্বাস দেন। 

বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর