১৩ আগস্ট, ২০২৩ ১৪:৫৪

কুলাউড়ায় মেলা বন্ধের দাবি

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

কুলাউড়ায় মেলা বন্ধের দাবি

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়ন এলাকায় এইচএসসি পরীক্ষাকে সামনে রেখে মাসব্যাপী হস্ত কুটিরশিল্প মেলার অনুমোদন বাতিলের দাবি জানানো হয়েছে। স্থানীয়দের না জানিয়ে এ মেলার আয়োজন করায় এলাকায় চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

ইতিমধ্যে মেলা বন্ধের দাবিতে রবির বাজার ব্যবসায়ী সমিতির নেতাকর্মীরা মানববন্ধন, বিক্ষোভসহ জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছেন।

জানা যায়, পৃথিমপাশা ইউনিয়নের কানিকিয়ারি গ্রাম সংলগ্ন মাঠে এ মেলার আয়োজন করেছে মা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট। এর দায়িত্বে রয়েছেন আবিদ হাসান লিটন নামে এক ব্যক্তি। তার দাবি, তিনি প্রশাসনের অনুমতি নিয়েছেন।

অন্যদিকে, স্থানীয় জনসাধারণসহ ব্যবসায়ীরা বলছেন, এটি কীসের মেলা জানেন না তারা। এই মেলা এখানে হলে ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়বেন। এ ছাড়া এলাকায় সংঘাতের সৃষ্টি হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে।

মেলা বন্ধের দাবিতে দফায় দফায় বাজার এলাকায় বৈঠক হচ্ছে। ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় মাইকিং করে সভাও করা হয়েছে। সর্বশেষ ব্যবসায়ী সমিতির নেতাকর্মীরা মানববন্ধন, বিক্ষোভসহ জেলা প্রশাসক বরাবর মেলা বন্ধের দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, আগামী ১৭ আগস্ট থেকে শুরু হচ্ছে এইচএসসি পরীক্ষা। এলাকায় কলেজ পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীরা সমস্যায় পড়বেন। এ ছাড়া রবির বাজার একটি গ্রাম্য বাজার। এখানে সাধারণ লোকজন আসেন বাজার করতে। মাসব্যাপী এ মেলা চললে এখানকার ব্যবসায়ীরা মারাত্মকভাবে ক্ষতির মুখে পড়বেন।

রবির বাজারের বাবুল আহমদ নামে এক দোকান মালিক বলেন, মাসব্যাপী কথিত এই মেলার কথা স্থানীয় ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যান জানেন না। নেই স্থানীয় কোনো উদ্যোক্তাও। তাহলে কার স্বার্থে, কারা এমন বড়সড় আয়োজনে করতে যাচ্ছে?

তিনি বলেন, গ্রামের ভেতর কথিত এই মেলা মানুষের পকেট কাটার ধান্দা আর অর্থনৈতিক লুটপাট ছাড়া আর কিছু নয়। তাছাড়া মদ, জুয়া, গাঁজা, নাচ, গান, নৃত্যের অশ্লীলতা, উঠতি বয়সী যুবক-যুবতীদের অবাধ আড্ডা ও মারামারি প্রভৃতি অসামাজিক অপরাধগুলো গ্রামীণ সমাজকে খুবই নগন্যভাবে বিষিয়ে তুলবে। এলাকায় নানা প্রকার অশান্তি ও অস্থিরতা বিরাজ করবে। তিনি এই মেলার বন্ধের দাবি জানান।

রবির বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. বদরুল ইসলাম বলেন, ব্যবসায়ীসহ স্থানীয় জনসাধারণ ও ইউনিয়ন পরিষদ কেউই এই মেলা সম্পর্কে জানেন না। মেলার আয়োজনকারীদের উদ্দেশ্যই মূলত এলাকায় সংঘাতের সৃষ্টি করা

তিনি বলেন, রবির বাজার ছোট একটি বাজার। এখানে মেলা হলে ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। মেলা বন্ধ না হলে ব্যবসায়ীরা কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবে বলে জানান তিনি।

পৃথিমপাশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিমিউর রহমান চৌধুরী ফুল বলেন, এলাকার ব্যবসায়ী ও মানুষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বিভিন্ন দপ্তরে মেলা না হওয়ার জন্য কথা বলেছেন ও লিখিত দিয়েছেন। তিনি বলেন, মেলা সম্পর্কে ইউনিয়ন পরিষদ অবগত নয়। মেলার আয়োজকরা তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ বা অনুমতিও নেননি। তিনি এখানে মেলা না করার জন্য আয়োজকদের অনুরোধ জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে মেলার দায়িত্বে থাকা আবিদ হাসান লিটন বলেন, তিনি প্রশাসনের অনুমতি নিয়েছেন। মেলার কাজও চলছে। আগামী ১৭ আগস্ট মেলা উদ্বোধনের কথা রয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহমুদুর রহমান খোন্দকার বলেন, বিভিন্ন শর্ত মোতাবেক ডিসি অফিস থেকে এ মেলার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। মেলার আয়োজনকারীদের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা যাতে শান্ত থাকে, সেদিক বিবেচনার জন্য বলা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম বলেন, মেলার বিভিন্ন শর্তগুলো মানায় এ মেলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কোনো সংঘাতের সৃষ্টি হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

রবির বাজার এলাকার বাসিন্দা, মৌলভীবাজার-(কুলাউড়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নবাব আলী আব্বাস খান বলেন, মেলা সম্পর্কে এলাকার জনসাধারণ, ব্যবসায়ীসহ ইউনিয়ন পরিষদ কেউই অবগত নয়। এ মেলা নিয়ে এলাকায় গ্রুপিং সৃষ্টি হয়েছে। মেলা এখানে না হওয়াই উত্তম বলে তিনি মনে করেন।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর