বগুড়ার তিন উপজেলার প্রায় ২১২ হেক্টর ফসলি জমি বাঙালি নদীর পানিতে ডুবেছে। তিন উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ফসল ডুবেছে সারিয়াকান্দিতে। এ উপজেলায় ১১২ হেক্টর জমির আমন ধানসহ অন্যান্য ফসল পানিতে নিমজ্জিত। এ ছাড়া সোনাতলা উপজেলার ৯৭ হেক্টর ও ধুনট উপজেলার ২ হেক্টর জমির ফসল পানিতে ডুবেছে। পানি বেড়ে যাওয়ায় ভাঙছে জমি। আতঙ্কিত তিন উপজেলার কৃষক।
জানা যায়, গত কয়েকদিন ধরেই বগুড়ায় বাঙালি নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আমন ধানসহ বিভিন্ন ধরনের প্রায় ২১২ হেক্টর জমির ফসল পানিতে নিমজ্জিত। বাঙালি নদীর ভাঙনে সারিয়াকান্দি উপজেলায় ১০ বিঘা কৃষি জমি বিলীন হয়েছে।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা এবং ধনুট ৩ উপজেলাতেই গত কয়েকদিন ধরে বাঙালি নদীতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত শুক্রবার নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে অতিক্রম করেছে। ওইদিন পানির উচ্চতা ছিল ১৫.৪২ মিটার। মঙ্গলবার সকালে বাঙালি নদীর পানির উচ্চতা ছিল ১৫.৭০ মিটার। গত সোমবার সকাল পর্যন্ত পানি বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় এ জেলার শতাধিক গ্রামের নিচু এলাকাগুলো প্লাবিত হয়েছে। ফলে এসব নিচু এলাকায় কৃষকের বেড়ে ওঠা আমন ধান, মাসকলাই, মরিচ এবং বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি পানিতে নিমজ্জিত হচ্ছে।
তিন উপজেলার কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, বাঙালি নদী সংলগ্ন সর্বমোট ২১২ হেক্টর জমির ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এর মধ্যে সারিয়াকান্দি উপজেলার ৯৫ হেক্টর আমন ধান, ১২ হেক্টর মাসকলাই, ২ হেক্টর মরিচ এবং ৩ হেক্টর শাকসবজিসহ মোট ১১২ হেক্টর জমির ফসল পানিতে আক্রান্ত হয়েছে। সোনাতলা উপজেলার ৯৫ হেক্টর আমন ধান, ১ হেক্টর মাসকলাই এবং ১ হেক্টর শাকসবজিসহ মোট ৯৭ হেক্টর জমির ফসল পানিতে আক্রান্ত হয়েছে। এ ছাড়াও ধনুট উপজেলার ২ হেক্টর আমন ধান পানিতে আক্রান্ত হয়েছে।
সারিয়াকান্দি হাটশেরপুর ইউনিয়নের তাজুরপাড়া গ্রামের কৃষক হানিফ প্রাং ও সোনাতলা সদর ইউনিয়নের নামাজখালী গ্রামের রাসেদ সরকার জানান, ৮ বিঘা জমিতে আমন ধান এবং ৪ বিঘা জমিতে তিনি মাসকলাইয়ের আবাদ করেছিলেন। সবটুকু জমির ফসলই এখন পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এ জমির ফসল দিয়ে আমার সারা বছর চলে যায়। এখন আমি কি খেয়ে বাঁচব, আমার সংসার কীভাবে চলবে?
এদিকে পানি বৃদ্ধিতে উপজেলার নারটী ইউনিয়নের চর গোদাগাড়ী গ্রামে বাঙালি নদীর ভাঙন শুরু হয়েছে। সেখানে গত ৩ দিনে ১০ বিঘা ফসলি জমি বাঙালি নদীতে বিলীন হয়েছে। ভাঙন এলাকার ২০ মিটারের মধ্যে বসবাস করছেন ১৩টি পরিবার। এভাবে ভাঙন অব্যাহত থাকলে ২ একদিনের মধ্যেই তারা বাড়িঘর ভেঙে অন্যত্র চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। এ উপজেলার নারচী ইউনিয়নের চর গোদাগাড়ী গ্রামের প্রায় ১ হাজার পরিবার ভাঙন হুমকিতে রয়েছে। হাটশেরপুর ইউনিয়নের তাজুরপাড়া এবং ভেগীরপাড়া গ্রামের ৪ হাজার পরিবারের লোকজন এখন ভাঙন আতঙ্কে রয়েছেন।
গত সোমবার সকালে নারচী চর গোদাগাড়ী গ্রামের কৃষক সায়েদ জামান প্রাংয়ের ১৪ শতাংশ, শাহা আলমের ১ বিঘা, সাইফুল ইসলামের ১ বিঘা, আনোয়ার হোসেনের ১ বিঘা এবং সুরমা বেগমের ৫০ শতাংশ ফসলি জমিসহ প্রায় ১০ বিঘা জমি বাঙালি নদীতে বিলীন হয়েছে।
কৃষক সায়েদ জামান জানান, সোমবার সকালে ৩০ মিনিটের মধ্যেই আমার পাকা আমন ধানসহ ১৪ শতাংশ জমি বাঙালি নদীতে ভেঙে গেছে। আমার বাড়ি থেকে ৫০ হাত দূরে অবস্থান করছে ভাঙন এলাকা। অতি দ্রুত এখানে ভাঙন মোকাবিলায় ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে আমাদের বসতভিটার মায়া ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে হবে।
বগুড়া জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হক জানান, যেহেতু পার্শ্ববর্তী জেলা গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে পানি কমতে শুরু করেছে। তাই সারিয়াকান্দিতেও পানি কমে যাবে। চর গোদাগাড়ী ভাঙন কবলিত এলাকায় অতি দ্রুত ভাঙন মোকাবিলায় কাজ শুরু হবে দ্রুত।
বিডি প্রতিদিন/এমআই