কুষ্টিয়ায় গত তিন বছরের মধ্যে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে। অপ্রতুল ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে এ পানি বের না হতে পারায় সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। ডুবে গেছে কুষ্টিয়া শহরের দক্ষিণ ভাগ। অধিকাংশ সড়কে জমেছে হাঁটুপানি। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, জেনারেল হাসপাতাল, সরকারি কলেজ, পুলিশ সুপারের বাসভবনসহ অনেক অফিসের প্রবেশ মুখ ডুবে গেছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন মানুষ। অন্যদিকে কিছু জমিতে পানি জমে ফসলের ক্ষতি হলেও আমন চাষিদের উপকার হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষি বিভাগ।
কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বৃষ্টিপাত পরিমাপ বিভাগের কর্মকর্তা আব্দুর রহমান জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১১৯ দশমিক ৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তিনি বলেন, আগের দিন বুধবার ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের রেকর্ড ছিলে ১০ দশমিক ২ মিলিমিটার। তিনি বলেন, গত তিন বছরের মধ্যে এটিই সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড। এর আগে ২০২০ সালে ১৪৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের রেকর্ড ছিলো।
বুধবার দিন ও রাত ভর চলা মাঝারি ও ভারী বর্ষণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে কুষ্টিয়া শহরে। বিশেষ করে শহরের এনএস রোড থেকে দক্ষিণ দিকের অধিকাংশ রাস্তা ডুবে গেছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বৃহস্পতিবার বেলা ৩টার সময়ও নামেনি এসব পানি। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন মানুষ। একেতো বৃষ্টিপাত হচ্ছে, অন্যদিকে নিচে হাঁটুপানি রিক্সা নিয়েও চলাচল করতে পারছে না মানুষ।
রিক্সাচালক আলতাব বলেন, পানিতে রিক্সার মোটরে পানি ঢুকে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া পানির নিচে সড়কে গর্ত থাকায় ঘটছে দুর্ঘটনা।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে আসা রোগী ও তার স্বজনদের যেতে হচ্ছে হাঁটুপানি পেরিয়ে। বেশি অসুস্থ রোগীকে নিয়ে যেতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে বললেন অটো রিক্সা চালক আলম। তিনি বলেন, অটো রেখে কোলে করে রোগীকে দিয়ে আসতে হচ্ছে।
পৌরসভার সেকেলে ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে অল্প বৃষ্টিতেও এ দশা হয় বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নাগরিকরা। কুষ্টিয়া জেলা সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি হাজী রফিকুল আলম টুকু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার এ চিত্র অনেক দিনের। দ্রুত সমাধান করার জন্য পৌর কর্তৃপক্ষকে মেগা প্রকল্প হাতে নেয়ার আহ্বান জানান তিনি। একই সঙ্গে তিনি নাগরিকদের ড্রেনের মধ্যে ময়লা আবর্জনা ও প্লাস্টিক পলিথিন না ফেলার আহবান জানান।
কেন জমছে পানি: গড়াই নদী ঘেঁষা কুষ্টিয়া শহর। কিন্তু নদী প্রান্তের চেয়ে শহরের দক্ষিণ প্রান্তের ভূমি ৬-৭ ফুট নিচু। সে কারণে শহরের পানিও নেমে আসে এদিকেই। যা দ্রুত নিষ্কাশন না হওয়ায় বৃষ্টির পরপরই দেখা দিচ্ছে এমন জলাবদ্ধতা।
কুষ্টিয়া পৌরসভার প্রধান প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দক্ষিণ প্রান্তে পানি নিষ্কাশন হয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের জিকে সেচ খালের নিচ দিয়ে তৈরি করা সাইফুন দিয়ে। ১৯৬২ সালে নির্মাণ করা এই সাইফুন বর্তমান বাস্তবতায় অপ্রতুল। দ্রুত পানি বের করতে ওই সাইফুনের আগে মোল্লাতেঘড়িয়া থেকে মন্ডল পাম্প পর্যন্ত ৪০ ফুট প্রশস্ত নিষ্কাশন নালা করার চেষ্টা করছে পৌর কর্তৃপক্ষ। জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরুর পর উচ্চ আদালতে মামলা চলায় সে চেষ্টাও থেমে আছে কয়েক বছর। তিনি বলেন, শহরের পানি বের করতে এই নালার কোন বিকল্প নেই। তিনি এই নালা করার ব্যাপারে সকলের সহযোগিতা চেয়েছেন। সাইফুন সংস্কার ও ও সংযুক্ত নালা করা হলে দ্রুত পানি নেমে যাবে- বলছেন এই প্রকৌশলী।
কৃষির পরিস্থিতি: এদিকে কৃষি অফিস বলেছে এ সময়ের বৃষ্টিতে কৃষির তেমন কোন ক্ষতি হয়নি। দু একটি জমির ফসলের ক্ষেত তলিয়ে যাওয়ার কথা বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. হায়াত মাহমুদ জানান এতে আমন ধান চাষীদের উপকারই হচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল