ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার আশায় শরীয়তপুর পলিটেকনিক্যাল ইন্সটিউটে ভর্তি হয়েছিলেন ইসমাইল হোসেন রাব্বি। ইঞ্জিনিয়ার হয়ে রিক্সাচালক বাবাকে একটু শান্তি দেবে এমনটাই আশা ছিল রাব্বির। দুই বোন ও ভাইর মধ্যে তিনিই সবার ছোট। একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে পরিবারটিতে চলছে শোকের মাতম। ছেলের কথা মনে পড়লেই ঢুকরে কেঁদে উঠছেন বাবা মিরাজ তালুকদার ও মা পারভীন বেগম। ছেলের এমন অকাল মৃত্যুকে মেনে নিতে পারছে না পরিবার ও স্থানীয়রা।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হলে রাব্বি শিক্ষার্থীদের পক্ষে অবস্থান নেন। ১৯ জুলাই ঢাকার শাহাবাগ এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন রাব্বি। গুলি তার কপাল দিয়ে ঢুকে মাথার পেছন দিয়ে বেরিয়ে যায়। পরে তার লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজে রাখা হয়েছিল। আন্দোলনে যোগ দেয়া ছেলেকে না পেয়ে শহরের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াচ্ছিল পরিবারটি। অবশেষে গত ৪ আগস্ট রাতে শুনতে পান রাব্বির লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে। পরে ৫ আগস্ট ছেলের লাশটি মাদারীপুর সদর উপজেলার পাঁচখোলা ইউনিয়নের পাঁচখোলা গ্রামে নিজ বাড়ি আনা হয়। পরে পারিবারিক কবরে দাফন করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, রাব্বি অনেক মেধাবী ছিলেন। তার স্বপ্ন ছিল সে ইঞ্জিনিয়ার হয়ে পরিবারের হাল ধরবে। কিন্তু সেই হাল আর ধরা হলো না। আমরা চাই যে পুলিশ তাকে এভাবে গুলি করে হত্যা করেছে সেই সকল পুলিশের বিচার চাই ও সরকারের কাছে গরিব অসহায় এই পরিবারের পাশে দাঁড়ানো জোর দাবি জানান।
স্থানীয় বাসিন্দা জয়নাল হোসেন জানান, অনেক কষ্ট করে রিক্সা চালক মিরাজ তালুকদার তার ছেলেকে শরীয়তপুর পলিটেকনিক্যাল ইন্সটিটিউটে ভর্তি করেছিল। ছেলে ইঞ্জিনিয়ার হবে। কষ্ট দূর হবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেলো।
নিহত রাব্বির বাবা মিরাজ তালুকদার বলেন, ১৯ জুলাই ছেলে আন্দোলনে যায়। এরপর তাকে খুঁজে পাইনি। পরে বিভিন্ন স্থানে খুঁজতে থাকি। পরে ৪ আগস্ট জানতে পারি তার লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। পরে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা লাশ নিয়ে বিচারের দাবিতে মিছিলও করে। ঢাকার পুলিশরা হাসপাতাল থেকে তাড়াহুড়ো করে লাশ নিয়ে দাফন করতে বলা হয়। পরে লাশ এনে বাড়ির পাশে দাফন করেছি। আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি পুলিশের গুলিতে আমার ছেলে নিহত হয়েছে। কি অপরাধ ছিলো আমার ছেলের? কেন তাকে হত্যা করা হলো? আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল