বগুড়ায় আবারও জমে উঠেছে ফুল মার্কেট। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর থেকে জমজমাট বেচাকেনা শুরু হয়েছে। এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে টানা কারফিউ চলার কারণে ভাটা পড়ে ফুল ব্যবসায়ীদের।
এর আগে, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর থেকে আবারও জমে উঠেছে ফুল মার্কেট।
জানা যায়, গত ১৬ জুলাই থেকে বগুড়াসহ সারাদেশে শুরু হয় কোটা সংস্কার আন্দোলন। এতে পুলিশ-ছাত্র দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। স্থবির হয়ে পড়ে বগুড়ার জনজীবন। পুরো শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। শহরের বিভিন্ন মার্কেট, বিপণী-বিতান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত, ব্যাংক-বীমা বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় ফুল মার্কেটও।
চলমান আন্দোলনে সরকারি নির্দেশনায় কারিফউ জারি করা হয়। ফলে ঠিকভাবে ফুল মার্কেট খুলতে পারেনি ব্যবসায়ীরা। এরপর শুরু হয় সরকার পতনের আন্দোলন। এই আন্দোলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতন হয়। আন্দোলনে ছাত্র-জনতার বিজয় হয়। টানা ২০ দিন পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের হলে আবারও জমে উঠেছে ফুল মার্কেট। অভিনন্দন দিতে ফুল মার্কেটে হুমড়ি খেয়ে পড়েন ছাত্র-জনতা। যার যার পছন্দমতো ফুল কিনছেন তারা।
বগুড়া ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক লক্ষন দাস জানান, এই মার্কেটে ১৭টি দোকান রয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আমরা ফুল মার্কেট খুলতে পারিনি। ফলে পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন পার করতে হয়েছে। এ ছাড়া সারাদেশে পুলিশ-ছাত্র সংঘর্ষের ঘটনায় অন্য জেলা থেকে বগুড়ায় ফুল আসেনি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর থেকে ফুল মার্কেটে বেচাকেনা জমে উঠেছে।
তিনি আরও জানান, আগের চেয়ে ফুলের দাম কমেছে। বর্তমানে লাল গোলাপ ৫ থেকে ৬ টাকা পিস বিক্রি হচ্ছে। যা আগে ছিল ৭ থেকে ৮ টাকা পিস। থাই গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকা পিস। পূর্বে ছিল ১৫ টাকা পিস। এ ছাড়া রজনীগন্ধা ৮ টাকা, জার্ভেরা ৮ টাকা পিস বিক্রি হচ্ছে। গাঁধা ফুল একশো পিস ৮০ টাকা ও গর্জা ১ পিস ৩০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। প্রকারভেদে ফুলের তোড়া বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকা পর্যন্ত।
ফুল কিনতে আসা ইয়াকুবিয়া স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী মোছা. জান্নাতি খাতুন ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী মোছা. মারজিয়া খাতুন জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর ফুলের দাম কমেছে। এর আগে অনেক দাম দিয়ে ফুল কিনতে হয়েছে। চাহিদা এবং সাধ্যের মধ্যে ফুল কিনতে পেরে অনেক খুশি।
তাদের মতো বিয়াম মডেল স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী মোছা. রিফাহ খাতুন এসেছেন ফুল কিনতে। তিনি তার বান্ধবীর জন্মদিনে ফুল উপহার দেবেন।
এদিকে বগুড়া শহীদ খোকন পার্ক এলাকার ফুল ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে বগুড়ায় প্রায় সব ধরনেরই ফুল চাষ হচ্ছে। যেমন-গোলাপ, রজনীগন্ধা, গ্লাডিয়া, জার্বেরা, গাদা ফুল, জিপসি, কামিনি পাতা, চন্দ্রমল্লিকা, গ্যালোডিলাক্স, কম্পোন, রডস্টিক। এসব ফুল চাষে লাভবান হচ্ছে ফুল চাষীরা। বর্তমানে বগুড়ার চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যান্য জেলাতেও তারা এসব ফুল বিক্রি করছেন। বগুড়ায় এখন বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ করা হচ্ছে। এ ছাড়াও বিক্রি বেড়ে গেলে ব্যবসায়ীরা যশোর, কালিগঞ্জ থেকেও ফুল নিয়ে আসেন বগুড়ায়। বগুড়ায় বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষে এগিয়ে আছে সদর উপজেলা। এ ছাড়াও জেলার শিবগঞ্জ, শাজাহানপুর ও সোনাতলা উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ করা হচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই