একদিকে চলছে রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠন এবং ব্যবসায়ীদের লাগানো বিভিন্ন দেয়ালের পোস্টার সরিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান। অন্যদিকে অপেশাদার হাতের ছোঁয়ায় দৃষ্টিনন্দন গ্রাফিতি আর আর্টে সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়ার বার্তা দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। নওগাঁ শহরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দেয়ালে ও আবাসিক এলাকায় স্থান পাচ্ছে বিভিন্ন চিত্র-দৃশ্য। এসব কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে স্কুলপড়ুয়া শতশত ছোট্ট শিক্ষার্থীরা। দেয়ালকর্ম এবং গ্রাফিতিতে স্মরণ করা হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদদের। তবে অধিকাংশ জায়গায় স্থান পেয়েছে রংপুরের শহীদ আবু সাঈদ। এছাড়া বিভিন্ন স্লোগান লেখা হয়েছে দেয়ালগুলোতে।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, নওগাঁ শহরের সৌন্দর্য নষ্টের অন্যতম প্রধান কারণ হলো বিভিন্ন স্থানে অযাচিতভাবে পোস্টার লাগানো। এই পোস্টারগুলো সাধারণত রাজনৈতিক, সামাজিক বা ব্যবসায়িক প্রচারের উদ্দেশ্যে লাগানো হয়। এগুলো শহরের বিভিন্ন বিল্ডিংয়ের দেয়াল, সড়কের পাশের ফুটপাত, ল্যাম্পপোস্ট ইত্যাদি জায়গায় লাগানো হয়। যা শহরের নান্দনিকতা ও পরিপাটি ভাবকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
নওগাঁ শহরের কেডির মোড় এলাকায় দেয়াল চিত্র অঙ্কন করা নওগাঁর বিএমসি মহিলা কলেজের অর্থনীতি বিভাগের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী দিপিকা বলেন, দেয়ালে গ্রাফিতি আঁকা শিক্ষার্থীদের একটি সৃজনশীল এবং প্রতিবাদী কর্মকাণ্ড। এতে সমাজের নানা সমস্যার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিবাদ যেমনি সামনে আসছে তেমনি শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা এবং শিল্পীসত্তার প্রকাশও হচ্ছে। আমরা একটি সুন্দর বাংলাদেশ দেখতে চাই। সেজন্য সবার আগে পরিবেশ সুন্দর করা প্রয়োজন। তাই আমরা সবার জায়গা থেকে এগিয়ে এসেছি। রাজশাহী কলেজের ইতিহাস বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী সাবরিনা সূচি বলেন, পোস্টারগুলো অনেক সময় পুরোনো হয়ে গেলে ময়লা-আবর্জনা তৈরি করে। শহরের পরিচ্ছন্নতাকে বিঘ্নিত করে। আবার পোস্টার লাগানোর সময় দেয়াল বা অন্যান্য অবকাঠামোতে আঠা বা রঙের দাগ পড়ে যায়। যা স্থায়ী ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এসব পোস্টার অপসারণ করতে না পারলে ঢাকার সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। তাছাড়া এসব পোস্টার শহরের নাগরিকদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এসব সমস্যা সমাধানে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন ও কঠোরভাবে তা বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।
নওগাঁ সরকারি কলেজের একাদ্বশ শ্রেনির শিক্ষার্থী লিখন, সোয়ায়েব, সরকারি কেডি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহিম, সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অর্চি জানায়, দেয়াল চিত্র অঙ্কন করার পাশাপাশি তারা বিভিন্ন জায়গায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করেছে। এ সময় সড়কে পড়ে থাকা ইট এবং ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করেছে। একই সঙ্গে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে পুড়ে যাওয়া বিভিন্ন ভবনের পরিষ্কার কার্যক্রমেও অংশ নিয়েছে তারা। দেশের এমন পরিস্থিতিতে শত শত তরুণ-তরুণীদের হাতে নতুন বাংলাদেশের এক উদ্ভাবনী স্বপ্ন আঁকা হচ্ছে। যে স্বপ্নের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে আন্দোলন করা শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শ্রমজীবীসহ দেশের সকল মানুষ।
বিডি প্রতিদিন/এএ