৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১৯:৪৬

ঝিনাইদহে বৈরী আবহাওয়ার প্রভাব ফসলের মাঠে

শেখ রুহুল আমিন, ঝিনাইদহ:

ঝিনাইদহে বৈরী আবহাওয়ার প্রভাব ফসলের মাঠে

ঝিনাইদহে টানা বৃষ্টির পর বৈরী আবহাওয়ায় মারাত্মক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে কৃষিতে। এরই মধ্যে জমিতে জমে থাকা বৃষ্টির পানি শুকাতে শুরু করেছে। আর মরতে শুরু করেছে মরিচ গাছসহ বিভিন্ন সবজির ক্ষেত। বর্তমান মাঠে ধান, মুলা, শিম ও লাউসহ অন্যান্য ফসল রয়েছে। নিচু জলাবদ্ধতা এলাকার সবজির জমিতে সমস্যা সবচেয়ে বেশি। এমন অবস্থা অব্যাহত থাকলে সব সবজির ফলন কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা কৃষকদের। তাতে তরে বাজারে দামের প্রভাব পড়ার শঙ্কা করছেন তারা।

কৃষি বিভাগ বলছেন, বর্তমানে মাঠে মরিচসহ যেসব সবজি রয়েছে তা খরিপ-২ মৌসুমের। বছরের মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত এই মৌসুমের সবজির চারা রোপণ করা হয়। তীব্র তাপদহে এবার সময়মত চারা রোপণ করতে পারেনি কৃষক। বেশির ভাগ কৃষক সেচের পানিতে চারাগাছ রোপণ করেছেন। জুন মাসে যে বৃষ্টি হয়েছে তা পর্যাপ্ত নয়। আবার শেষদিকে টানা বৃষ্টি হয়েছে। প্রাকৃতিক দূর্যোগে একটু আগেই গাছের জীবনকাল শেষ হয়েছে। তবে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে শীতের আগাম সবজি বাজারে আসতে শুরু করবে। 

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নগরবাথান, হলিধানী, বাজার গোপালপুর, ডাকবাংলা, বেড়াশুলাসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সবজি চাষীরা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন। এসব এলাকায় কাঁচামরিচ, শিম, লাউ, পটল, বেগুন, শসা, মুলাসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ হয়ে থাকে। জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী এ মৌসুমে ৫' হাজার ৪২৯ হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ থেকে ৯২' হাজার ৯৪৫ দশমিক ৪৮ মেট্রিক টন সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। সেখানে সদর উপজেলায় সবজির আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৭৪০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে মরিচ ৫২৫ হেক্টর, লাউ ১২৯ হেক্টর, পটল ৮২ হেক্টর, গ্রীষ্মকালীন শিম ২৫ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে।
কৃষকরা জানান, গত এক মাস ধরে আবহাওয়ার বৈরিতা গেল। কখনও মুষলধারে আবার কখনও ভারি বৃষ্টি হয়েছে। কয়েকদিন মাঝে রোদ হলেও আবার বৃষ্টি শুরু হয়। এতে সবজি ক্ষেতে পানি জমে গিয়েছিল। গাছের গোড়ার মাটি স্যাঁতসেতে থাকায় ছত্রাক জাতীয় রোগসহ ফসলে বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে রয়েছে কাঁচামরিচ গাছ। নগরবাথান, হলিধানী, বাজার গোপালপুর, দূর্গাপুর, চোরকোল, মামুনশিয়া, কামতা কুবিরখালি এলাকার অনেক গাছই মরে গেছে। কোথাও আবার মরিচ গাছের পাতা কুঁচকে শুকিয়ে যাচ্ছে, কমে যাচ্ছে ফলন। শিমের ফুল ঝরে যাচ্ছে, পাতা শুকানো রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মুলা গাছ।
সদর উপজেলা মধুহাটি ইউনিয়নের দূর্গাপুর গ্রামের ডালিম হোসেন বলেন, ২ বিঘা জমিতে ৭০ থেকে ৮০  হাজার টাকা খরচ করে মরিচ গাছ লাগিয়েছিলাম। লাখ খানেক টাকার মরিচ বিক্রি করেছি। এরপর বৃষ্টি হয়েছে, গাছের গোড়ায় পচন গেলে যায়। দোকান থেকে ওষুধ এনে দিয়েছিলাম কিন্তু কোনো কাজে আসেনি। সব গাছ মরে গেছে।
চোরকোল গ্রামের কৃষক আব্দুল মতিন বলেন, আবহাওয়ার কারণে তার ২ বিঘা জমির মরিচ মারা গেছে। এদিকে হাজরা গ্রামের কৃষক মোঃ বোরাক ডাক্তার জানান মাঠের অনেকের মরিচ গাছ মরে যাচ্ছে। ফলে কেউ কেউ তাড়াহুড়ো করে মরিচ তুলে ফেলছে।  

ঝিনাইদহ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূর-এ-নবী বলেন, ক্ষেতের পানি দ্রুত অপসারণ করা না গেলে মরিচ গাছে ছত্রাকের আক্রমণ হতে পারে। মারা যেতে পারে অন্যান্য সবজি গাছ। এ জন্য জমির পানি দ্রুত নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। গাছের গোড়ায় স্প্রে করতে হবে কার্বেনডাইজিন গ্রুপের ছত্রাকনাশক। মরিচে কোথাও কোথাও পোকামাকড়ের আক্রান্ত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কৃষক যদি পরিমিত মাত্রায় কীটনাশক ব্যবহার করেন তাহলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সমাধান পাবেন।

বিডি প্রতিদিন/এএম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর