প্রতিবছর শেরপুরে সীমান্তবর্তী তিন উপজেলায় পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। তবে গত বছরের শেষ দিকে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় সীমান্তে তিন উপজেলা তছনছ হয়। ওই বন্যার রেশ না কাটতে আবারও বন্যার আগাম বার্তায় আতংকে রয়েছে ওই তিন উপজেলার লাখ লাখ মানুষ।
গত দুই দিন যাবৎ আবহাওয়া বার্তার সূত্র ধরে জেলা প্রশাসক তিন উপজেলায় বন্যা সতর্কতা জারি করছে। বার্তায় শেরপুর সীমান্তে উজানে ভারতের মেঘালয় ও আসাম রাজ্যে ব্যাপক বর্ষণ হওয়ায় সরকার আগাম বন্যার পূর্বাভাস দিয়েছে। এনিয়ে শেরপুরের জেলা প্রশাসন থেকে জেলার সীমান্তবর্তী তিন উপজেলায় পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যার আগাম সতর্ক অবস্থা জারি করে মাইকিং করছে। সেই সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগকে বন্যা মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকার জন্য পত্র প্রেরণ করেছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ওই তিন উপজেলার অন্তত পাঁচটি নদীতে সামান্য পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। কোথাও প্লাবনের খবর পাওয়া যায়নি। তবে কোথাও কোথাও গত রাতের প্রবল বৃষ্টির পানি জমে আছে।
জানা গেছে, ইতিমধ্যে জেলায় দুই দিন ধরে বৃষ্টি এবং উজানের পাহাড়ি ঢলে সীমান্তের সবগুলো নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। বিশেষ করে জেলার নালিতাবাড়ি উপজেলা ভোগাই ও চেল্লাখালী, ঝিনাইগাতী উপজেলার মহারশি ও মালিঝি এবং শ্রীবরদী উপজেলার কর্ণঝড়া নদীর পানি বিপদ সীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও প্রতিদিনই পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এদিকে গতবছর স্মরণকালের সর্বোচ্চ পাহাড়ি ঢলের কারণে ফসল, ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় এবার আগাম বন্যার আশঙ্কায় স্থানীয়রা বেশ শংকায় রয়েছে। সবচেয়ে বেশি আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে সীমান্তবর্তী তিন উপজেলার কৃষকরা। এখনো সব জমির ধান কাটা শেষ হয়নি।কিছু ধান আধা পাকা রয়েছে।তবে প্রশাসনের আগাম বার্তায় কৃষক ধান কাটতে তোড়জোর করছে। এর ফলে কৃষি শ্রমিকের মজুরি বেড়ে গেছে। ওই তিন উপজেলায় এবার বোরো আবাদ হয়েছে ১ লাখ ২৬ হাজার ৯ শত একর জমিতে। এছাড়া ওইসব এলাকায় আরো কয়েক হাজার একর জমিতে বিভিন্ন সবজির আবাদ করা হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে গতকাল শনিবার পর্যন্ত সর্বশেষ ৯০% ধান কাটা হয়েছে। তবে মাঠের বাস্তবতা হলো এখনও শতকরা ২০ ভাগের বেশী ধান মাঠে রয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, বন্যা মোকাবেলায় আগাম প্রস্তুতিসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
শেরপুর জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, বন্যা পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা প্রতিটি উপজেলায় মাইকিংয়ের মাধ্যমে জনসচেতনতা তৈরি করছি। পাশাপাশি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হচ্ছে এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকেও প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোও বন্যা মোকাবিলায় সক্রিয়ভাবে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল