একসঙ্গে জানাজা, পাশাপাশি দাফন — নাটোরের বড়াইগ্রামে ট্রাক-মাইক্রোবাস সংঘর্ষে প্রাণ হারানো কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের ধর্মদহ গ্রামের চারজনকে চোখের জলে বিদায় জানাল হাজারো মানুষ। বুধবার (২৩ জুলাই) সকালে নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার আইড়মারী এলাকার তরমুজ পাম্পের সামনে বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কে ভয়াবহ এ দুর্ঘটনা ঘটে। সিরাজগঞ্জে অসুস্থ স্বজনকে দেখতে যাওয়ার পথে সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই নিহত হন পাঁচজন। পরে হাসপাতালে আরও তিনজনের মৃত্যু হয়।
নিহতদের মধ্যে ছিলেন কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ধর্মদহ গ্রামের মৃত জিল্লুর রহমানের ছেলে জাহিদুল ইসলাম (৫৫), তার স্ত্রী সেলিনা খাতুন (৫০), ভাই শহিদুল ইসলামের স্ত্রী আনোয়ারা খাতুন আন্না (৫৫), ভাই মিজানুর রহমানের স্ত্রী আনোয়ারা খাতুন আনু (৫০), বোন প্রাগপুর গ্রামের রফেজ চৌধুরীর স্ত্রী ইতি খাতুন (৪০), একই গ্রামের জয়নাল আবেদীনের ছেলে গাড়িচালক সাহাব হোসেন (৩৫), এবং মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বেতবাড়ীয়া গ্রামের মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী আঞ্জুমানারা (৭৫) ও মেয়ে সীমা খাতুন (৩৫)।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) দুপুর ২টার দিকে ধর্মদহ ফরাজীপাড়া গোরস্থানে নিহত জাহিদুল ইসলাম, তার স্ত্রী, ভাইয়ের দুই স্ত্রীর জানাজা একসঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় হাজারো মানুষ অংশগ্রহণ করেন। এরপর তাদের পাশাপাশি কবরস্থ করা হয়। একই গ্রামের নিহত গাড়িচালক সাহাব হোসেনকেও রাতে দাফন করা হয়।
এদিকে নিহত জাহিদুলের বোন ইতি খাতুন, শাশুড়ি আঞ্জুমানারা ও শ্যালিকা সীমা খাতুনের মরদেহ প্রাগপুর ও গাংনীর নিজ নিজ গ্রামে পৌঁছানোর পর বৃহস্পতিবার সকালে তাদের দাফন করা হয়।
নিহতদের আত্মীয় অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য জানারুল ইসলাম বলেন, “জাহিদুলের ছেলে সোহানের অসুস্থ স্ত্রীকে দেখতে সিরাজগঞ্জ যাচ্ছিল তারা। সকাল ৭টার দিকে রওনা দিয়ে কিছুক্ষণ পরই দুর্ঘটনার কবলে পড়েন।”
একই পাড়ায় পাশাপাশি তিনটি বাড়ির চারজনের একসঙ্গে মৃত্যুতে এলাকাবাসী বেদনার্ত। ধর্মদহ ফরাজীপাড়ার গৃহবধূ রোমানা খাতুন বলেন, “এমন হৃদয়বিদারক দৃশ্য আগে কখনও দেখিনি।”
আদাবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বাকী বলেন, “একই পরিবারের এতজনের মৃত্যুর ঘটনা অত্যন্ত মর্মান্তিক ও দুঃখজনক। আমাদের এলাকায় এর আগে এমন ঘটনা ঘটেনি।”
বুধবার বেলা ১০টার দিকে বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের তরমুজ পাম্প এলাকায় ট্রাক-মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই পাঁচজন মারা যান। বাকি তিনজন বড়াইগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
বিডি প্রতিদিন/আশিক