বনের ভেতর এক সুন্দর ফুলের বাগানে মৌমাছিদের একটি ব্যস্ত বাসা ছিল। ছোট্ট মৌমাছি মিষ্টি প্রতিদিন ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করত। তার মা তাকে শিখিয়েছিল, ‘মধু আমাদের পরিশ্রমের ফল। অন্য কারও জিনিস নেওয়া ভালো নয়।’ মিষ্টি সেই শিক্ষা মনে রেখেছিল এবং প্রতিদিন সৎ পথে পরিশ্রম করত।
এক দিন বাগানের পাশে একটি চতুর শেয়াল এসে হাজির হলো। শেয়ালটি অনেক ক্ষুধার্ত, কিন্তু খাবারের সন্ধান পাচ্ছিল না। হঠাৎ সে মৌমাছির বাসাটি দেখে বলল, ‘আহা, মধু যদি পাই, তাহলে তো আমার পেট ভরে যাবে!’
শেয়াল কিছুক্ষণ বাসার চারপাশে ঘোরাফেরা করল। তখন মিষ্টি বাসা থেকে বাইরে এসে শেয়ালকে জিজ্ঞেস করল, ‘তুমি এখানে কী করছো?’ শেয়াল মিষ্টি গলায় বলল, ‘তোমাদের বাসা তো খুব সুন্দর! আমি শুধু দেখতে এসেছি।’
মিষ্টি জানত, শেয়ালের মুখে চাতুরী আছে। সে সাবধান হয়ে বলল, ‘আমাদের মধু কারও জন্য নয়, এটা আমরা কঠোর পরিশ্রম করে সংগ্রহ করি।’ শেয়াল তখন বলল, ‘আমি তো তোমার মধু চুরি করতে চাই না। আমি তো বন্ধু হতে চাই!’
পরের দিন, শেয়াল লুকিয়ে রাতে মৌমাছির বাসায় ঢুকতে চাইল। বাসার পাহারাদার মৌমাছি তাকে দেখে তাড়িয়ে দিল। শেয়াল তখন অন্য পরিকল্পনা করল। সে ভাবল, ‘যদি আমি কোনোভাবে মৌমাছিদের বিভ্রান্ত করতে পারি, তাহলে মধু চুরি করতে পারব।’
শেয়াল গিয়ে পাখিদের সঙ্গে গল্প করতে লাগল। সে বলল, ‘তোমরা জানো, মৌমাছিরা খুব কৃপণ। তারা তাদের মধু কাউকে দেয় না। অথচ মধু তো সবার জন্য।’ পাখিরা বলল, ‘তাহলে তুমি কী করবে?’ শেয়াল বলল, ‘আমি প্রমাণ করব যে মধু শুধু তাদের নয়।
শেয়াল এক রাতে বড় এক দম নিয়ে মৌমাছির বাসার কাছে গিয়ে চুপিসারে ঢুকে মধু চুরি করল। সে খুব আনন্দিত ছিল এবং ভাবল, ‘কেউ আমাকে ধরতে পারবে না।’
পরের দিন সকালে মিষ্টি ও তার দল দেখল, তাদের অনেক মধু নেই। সবাই হতবাক হয়ে গেল। মিষ্টি বলল, ‘এটা তো চুরি হয়েছে। আমাদের কারও জন্যই ভালো কিছু বাকি নেই।’
তখন বড় মৌমাছি রানি এসে বলল, ‘পরিশ্রমের ফল চুরি হয়ে গেলে আমাদের কাজ করা কঠিন হয়ে পড়ে। কিন্তু আমরা আমাদের পরিশ্রম চালিয়ে যাব। আর চোরকে ধরতে হবে।’
মিষ্টি ও তার দল গিয়ে শেয়ালের পায়ের ছাপ দেখতে পেল। তারা শেয়ালের গর্তে গিয়ে বলল, ‘তুমি আমাদের মধু চুরি করেছো, আমরা জানি।’ শেয়াল ভয় পেয়ে বলল, ‘আমি আর কখনো চুরি করব না। মধু চুরি করলে যে সত্যিকারের আনন্দ পাওয়া যায় না, তা আমি বুঝতে পেরেছি।’
মিষ্টি বলল, ‘তাহলে মধু ফিরিয়ে দাও এবং শপথ করো যে তুমি আর কখনো মিথ্যা কথা বলবে না।’ শেয়াল রাজি হলো। মৌমাছিরা তাদের মধু ফিরে পেল এবং শেয়ালও তার ভুল থেকে শিক্ষা নিল।
এভাবেই মৌমাছিরা তাদের পরিশ্রমের মর্যাদা রক্ষা করল, আর শেয়াল বুঝল সৎ পথে চলাই জীবনের আসল শিক্ষা।