পদ্মার কোলঘেঁষা এক ছোট্ট গাছে থাকত মাছরাঙা পাখি। নাম মনা। সারা দিন সে নদীর ধারে ঘুরে বেড়াত, মাছ ধরত, আবার নদীর গল্প শুনত।
এক দিন ভোরে মনা নদীর পাড়ে গিয়ে দেখল, পানির ভিতর ঝিলমিল করছে কিছু। কৌতূহলী হয়ে সে ঝুঁকে তাকাতেই দেখল রূপার মতো চকচকে একটা মাছ। মাছটি হেসে বলল, ‘ভয় পেও না, আমি ইলিশ। আমি সাগর থেকে এসেছি।’
মনা বিস্মিত হয়ে বলল, ‘সাগর! এত দূর থেকে এলে কীভাবে?’
ইলিশ হাসতে হাসতে বলল, ‘আমরা ইলিশ মাছ সাগরে বড় হই, কিন্তু ডিম দিতে নদীতে আসি। নদীর স্বচ্ছ জলে আমাদের বাচ্চারা জন্ম নেয়। তাই দূর পথ পাড়ি দিয়ে এসেছি।’
মনা অবাক হয়ে বলে উঠল, আহা! তুমি তো দারুণ সাহসী যাত্রী।’
ইলিশ মাথা নাড়িয়ে বলল, ‘হ্যাঁ, সাহস না থাকলে নদীর স্রোত পেরোনো যায় না। তবে মানুষের জাল আমাদের জন্য ভয়ানক বিপদ।’
কথাটি শুনে মনা একটু দুঃখ পেল। সে ভাবল, মানুষ যদি সব মা ইলিশদের ধরে ফেলে, তবে বাচ্চা ইলিশেরা কেমন করে জন্মাবে?
ঠিক তখনই ইলিশ বলল, ‘তুমি তো পাখি, আমাদের কথা সবাইকে বলে দিও। যেন মানুষ মা ইলিশ ও ছোট্ট বাচ্চা ইলিশকে ধরে না ফেলে।’
মনা খুশি মনে রাজি হলো। এরপর সে গ্রামের শিশুরা যখন নদীর ধারে মাছ ধরতে এলো তখন সে তাদের মা ইলিশ মাছ ও ছোট ছোট ইলিশ মাছ ধরতে মানা করল এবং বলল, ‘ইলিশ আমাদের দেশের গর্ব। তাদের বড় হতে দাও, তাহলে আমাদের দেশ হতে ইলিশ রপ্তানি করে বৈদেশিক রেমিট্যান্স আহরণ করা যাবে এবং দেশের মানুষ ইলিশ মাছ খেতে পারবে। তাই আমাদের উচিত ২৫ সেন্টিমিটারের চেয়ে ছোট ইলিশ ও মা ইলিশ না ধরা এবং ক্রয় বিক্রয় থেকে বিরত থাকা। তাহলে দেশে সবার ঘরে ঘরে আনন্দ রবে। একটা নির্দিষ্ট সময় পর তারা ইলিশ মাছ ধরতে পারবে ও খেতে পারবে। সে সময় পর্যন্ত তাদের ধৈর্য ধারণ করতে হবে। গ্রামের শিশুরা পাখির কথা সহজেই বুঝতে পারল এবং প্রতিজ্ঞা করল, তারা বড়দেরও বলবে যেন ডিমওয়ালা ও ছোট ইলিশ না ধরে। সেই থেকে মনা আর ইলিশ ভালো বন্ধু হয়ে গেল। আর নদীর জলে ইলিশেরা নিরাপদে সাঁতার কাটতে লাগল।