বুধবার, ২০ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

পাহাড়ে ব্রাশফায়ার

অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করুন

পাহাড়ে সন্ত্রাসী গ্রুপের অপতৎপরতায় জীবনহানি নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। পাহাড়ি-বাঙালি নির্বিশেষে পার্বত্য এলাকার সব মানুষই চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসনির্ভর পাহাড়ি রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর অপরাজনীতির শিকারে পরিণত হচ্ছে। পার্বত্য শান্তিচুক্তির পর পাহাড়ে শান্তি ফিরে আসবে- এমনটিই আশা করা হয়েছিল। কিন্তু পাহাড়ি সংগঠনগুলোর অন্তঃকোন্দল সেই সম্ভাবনাকে ম্রিয়মাণ করে তুলেছে। গত ১৫ মাসে পার্বত্য তিন জেলায় পাহাড়ি রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর সংঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন ৫৮ জন। সোমবার উপজেলা পরিষদের দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে সন্ত্রাসীদের ব্রাশফায়ারে নির্বাচনী কর্মকর্তাসহ অন্তত ছয়জন নিহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আরও ১৪ জন। আহতের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। সোমবার বাঘাইছড়ির কংলাক এলাকার ভোট কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ শেষে প্রিসাইডিং অফিসারসহ অন্যরা নির্বাচনী সরঞ্জাম নিয়ে উপজেলা সদরে ফেরার পথে নয়মাইল এলাকায় হামলার সম্মুখীন হন। ধারণা করা হচ্ছে, পাহাড়ি কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এ হামলার সঙ্গে জড়িত। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুরো বাঘাইছড়ি উপজেলায় অতিরিক্ত সেনা, পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। পাহাড়ে সংঘাত দানা বেঁধে ওঠে ১৯৭২ সালে। এ সময় পাহাড়িদের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার নামে গড়ে ওঠে মানবেন্দ্র লারমার নেতৃত্বে জনসংহতি সমিতি নামের সংগঠন। ’৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর জিয়াউর রহমান সরকারের কিছু কর্মকাণ্ড পাহাড়ে অশান্তির দাবানল সৃষ্টি করে। ’৯৭ সালে সম্পাদিত শান্তিচুক্তির আওতায় পার্বত্য তিন জেলায় শান্তি ফিরে আসার সম্ভাবনা দেখা দেয়। কিন্তু জনসংহতি সমিতির একাংশ শান্তিচুক্তির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ইউপিডিএফ নামের সংগঠন গড়ে তোলায় পাহাড়ে প্রত্যাশিত শান্তি ফিরে আসেনি। পরে পাহাড়ি সংগঠনগুলোর সদস্যরা চাঁদাবাজিকে তাদের পেশা হিসেবে বেছে নেওয়ায় পরিস্থিতির ক্রমাবনতিই পাহাড়বাসীর নিয়তির লিখন হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুই পাহাড়ি সংগঠনের ভাঙনে পাহাড়ে অসহনীয় পরিবেশ দানা বেঁধে উঠেছে। আমরা আশা করব, সোমবারের সন্ত্রাসী ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের সাধ্যের সবকিছুই করবে। এটি তাদের কর্তব্য বলে বিবেচিত হওয়া উচিত।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর