শুক্রবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

এলিফ্যান্ট রোডের অবাঞ্ছিত ঘটনা : আইনি ও বিধিগত বিশ্লেষণ

বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক

এলিফ্যান্ট রোডের অবাঞ্ছিত ঘটনা : আইনি ও বিধিগত বিশ্লেষণ

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এবং আইনের শাসনের মন্ত্রে যারা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাসী ১৮ এপ্রিল ছিল তাদের জন্য একটি আনন্দের দিন, উৎফুল্ল হওয়ার দিন, সরকার এবং পুলিশ প্রশাসনকে বিশেষ করে ডিসি হারুনকে ধন্যবাদ জানানোর দিন কেননা সেদিন গ্রেফতার করা হয়েছে বহু অপরাধে অভিযুক্ত আসামি, ধর্মব্যবসায়ী মামুনুল হককে। এ গ্রেফতার একদিকে যেমন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বিজয়, অন্যদিকে আইনের শাসনেরও বিজয় কেননা ধর্মব্যবসায়ী মামুনুল হক দিনের পর দিন অপরাধ করেও আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বেড়াচ্ছিল। মামুনুলের গ্রেফতার ছিল যেমনি আনন্দের, ঠিক আরও একটি দুঃখজনক ঘটনাও ঘটেছিল একই দিন। সারা দিন টেলিভিশনের পর্দায় আমাদের নজর ছিল মামুনুলের গ্রেফতারের ব্যাপারে বিধায় অন্য দুঃখজনক খবরটি আমার মতো অনেকেই জানতেও পারেননি। অবশেষে সন্ধ্যায় যখন এক টেলিভিশন সাংবাদিক ঘটনাটির ওপর আমার সাক্ষাৎকার চাইল, তখনই আমি এটি প্রথম জানলাম এবং সেই সাংবাদিকের পাঠানো ভিডিওটি দেখার সুযোগ পেলাম।

আমার এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারকদের কাছে ঘটনাটি নিশ্চিতভাবে অত্যন্ত বেদনাদায়ক। যে তিনজন ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের সবাই মুক্তিযুদ্ধের সন্তান বলে দাবি করেছেন। আজ যখন দেখতে পাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধীদের সন্তানরা রাষ্ট্রের বিভিন্ন জায়গায় ঘাপটি মেরে বসে আছে, সেখানে মুক্তিযুদ্ধের সন্তানগণ পুলিশ বা প্রশাসনে রয়েছে জানলেই আনন্দে বুক ভরে যায়। আশার আলো খুঁজে পাই। ডা. জেনি যে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধার কন্যা তা প্রমাণিত। ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব এবং একজন পুলিশ কর্মকর্তারও দাবি তারা মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান। তারা প্রকাশ্যেই এ কথা বলায় তাদের দাবি আপাতদৃষ্টিতে বিশ্বাস করাটাই সংগত।

দুঃখ এবং দুর্ভাবনার আর একটি বড় কারণ হলো আজ যেসব সংস্থা বা গোষ্ঠী মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে জিইয়ে রাখছে এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকারকে বিশেষভাবে সহায়তা করছে তাদের মধ্যে রয়েছেন চিকিৎসক সম্প্রদায় এবং পুলিশ বাহিনী। এ দুই বাহিনীর সদস্যরা নিজেদের জীবন বাজি করে যেভাবে করোনাবিরোধী যুদ্ধে নেমেছেন তা নিশ্চয় প্রশংসনীয়। সুতরাং এ দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব অমঙ্গলই ডেকে আনবে বিধায় সে দ্বন্দ্ব যে কোনো মূল্যে ঠেকাতে হবে। এ ব্যাপারে মহামান্য হাই কোর্ট অত্যন্ত যথার্থই বলেছেন এ তিন ব্যক্তির দ্বন্দ্ব যেন  গোষ্ঠীগত পর্যায়ে না পৌঁছে। আমিও মনে করি ঘটনাটি তিন ব্যক্তির দ্বন্দ্বের মধ্যেই সীমিত রাখতে হবে সবার স্বার্থে।

তার পরও আইনের দৃষ্টিতে সে ঘটনায় কার কী দায়দায়িত্ব ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন। ডা. জেনি বঙ্গবন্ধু চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহযোগী অধ্যাপক। ¯œাতোকোত্তর ডিগ্রিধারী একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছাড়াও তিনি একজন উপসচিব মর্যাদার গণকর্মকর্তা। তার দাবিমতে তিনি তার পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য হাসপাতালে যাওয়ার সময় পুলিশ তাকে থামায়। থামানোটা নিশ্চিতভাবে পুলিশের দায়িত্বে পড়ে, কেননা লকডাউন জারির পর পুলিশের দায়িত্ব এটা যাচাই করা চলাচলকারীর চলাচলের বৈধ অধিকার রয়েছে কি না। যে আইন দ্বারা লকডাউন জারি করা হয়েছে সে আইনে অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে কর্তব্যরত চিকিৎসকদের চলাচল বাধামুক্ত রাখা হয়েছে। অবশ্য এটা ঠিক, যে ব্যক্তি চলাচল করছেন তার পরিচয় কর্তব্যরত পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেটের জানার প্রয়োজন রয়েছে। যতটুকু জেনেছি পুলিশ তার পরিচয় চাইলে ডা. জেনি বলেন তিনি সেটি ঘরে ফেলে এসেছেন। এটা হতেই পারে। কিন্তু অ্যাপ্রোন পরিহিতা ডা. জেনি গাড়িতে বঙ্গবন্ধু চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকারসহ আরও কিছু কাগজ দেখানোর পর ব্যক্তিগত পরিচয়পত্র দেখানোর জন্য চাপ দেওয়াটা অবশ্যই বাড়াবাড়ির পর্যায়ে পৌঁছেছিল। বঙ্গবন্ধু চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকার দেখার পর পুলিশ কর্মকর্তার বাড়াবাড়ি ছিল অযৌক্তিক, বেআইনি এবং অনুচিত। এর পরও সন্দেহ থাকলে পুলিশ কর্মকর্তা গাড়ির নম্বর বা মালিকানা দলিল নিয়ে ডা. জেনিকে যেতে দেওয়াই হতো আইন এবং যুক্তি সংগত। বেআইনি কথাটি বলছি এ কারণে যে আমাদের দন্ডবিধির ১৮৬ ধারামতে কোনো গণকর্মকর্তাকে তার দায়িত্ব পালনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

একজন পুলিশের আইনসংগত দায়িত্বে বাধা দেওয়া যেমন শাস্তিযোগ্য অপরাধ, একজন গণকর্মকর্তার আইনসংগত দায়িত্বে বাধা দেওয়া তেমনি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তা ছাড়া যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া কোনো চিকিৎসকের পথ রুদ্ধ করলে এক বা একাধিক রোগীর মৃত্যুও হতে পারে। সে অর্থে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা যদি সবকিছু যেনে ডা. জেনির দায়িত্বস্থলে যাওয়ার পথে যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া বাধা সৃষ্টি করে থাকেন তাহলে নিশ্চয় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। তবে ডা. জেনি যদি পরিচয়পত্রে সঙ্গে থাকার পরও গোঁড়ামি করে তা না দেখিয়ে থাকেন তাহলে তার অন্যায়ও সমর্থন-অযোগ্য।

ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবের বেলায়ও একই কথা প্রযোজ্য। একজন ম্যাজিস্ট্রেট যখন আদালতে বসেন তখন মর্যাদায় তিনি একজন বিচারক, যার কারণে অনেক আইন থেকে তিনি অব্যাহতি পেতে পারেন। কিন্তু তিনি যখন প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেন তখন কিন্তু তিনি বিচারকের মর্যাদায় থাকেন না, তখন তিনি একান্তই একজন গণকর্মকর্তা, এমনকি তিনি যদি মোবাইল কোর্টও পরিচালনারত থাকেন। কেবল সুপ্রিম কোর্ট এবং হাই কোর্টের বিচারপতিগণ যেখানেই যান তারা সেখানেই বিচারপতি থাকেন। অর্থাৎ আদালত তাদের সঙ্গেই চলে। কিন্তু এ বিধান ম্যাজিস্ট্রেট বা নিম্ন আদালতের বিচারকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। সে অবস্থায় তিনি কোনো আইন থেকেই অব্যাহতি পেতে পারেন না। সে অর্থে সেই ম্যাজিস্ট্রেটও যদি সব জানার পরও ডা. জেনির যাত্রাপথ রুদ্ধ করে থাকেন তাহলে তিনিও একজন গণকর্মকর্তার দায়িত্বে বাধা দিয়ে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। এ ক্ষেত্রে ডা. জেনির গাড়িতে বঙ্গবন্ধু চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকার যথেষ্ট বিবেচনা করাই যৌক্তিক হতো। অবশ্য ডা. জেনির কাছে তার পরিচয়পত্র থাকা সত্ত্বেও যদি তিনি না দেখিয়ে থাকেন তাহলে ডা. জেনিকে নির্দোষ বলা যায় না। সেটা নির্ভর করবে তদন্তের ওপর।

প্রত্যেক গণকর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য বেশ কিছু বিধান রয়েছে যা তাদের পালন করা অপরিহার্য এবং যার ব্যত্যয় ঘটলে জেল -জরিমানা না হলেও দায়ী কর্মচারী-কর্মকর্তাকে বিভাগীয় সাজা দেওয়া যায়। যা এমনকি চাকরিচ্যুতিও ঘটাতে পারে। এর একটি বিধান হলো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যথাযোগ্য সম্মান প্রদর্শন। যে পুলিশ কর্মকর্তা ঘটনার সঙ্গে জড়িত তিনি নিশ্চয় একজন পুলিশ পরিদর্শকের ওপরের মর্যাদায় ছিলেন না। সে অর্থে মর্যাদাগতভাবে তার সঙ্গে ডা. জেনির যিনি একজন উপসচিব মর্যাদার, মর্যাদাগত ব্যবধান বিশাল। অর্থাৎ পুলিশের মর্যাদাক্রমে বিচার করলে ডা. জেনির মর্যাদা একজন এসপিসম। কিন্তু সেই পুলিশ কর্মকর্তা একজন উপসচিবকে যে মর্যাদা দেখাতে বাধ্য তা তিনি দেখাননি বলেই ভিডিওচিত্র থেকে আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে। পুলিশ কর্মকর্তা একটিবারও ডা. জেনিকে ‘স্যার’ বলে সম্বোধন করেননি, যেটা তার জন্য অপরিহার্য ছিল। একই কথা ম্যাজিস্ট্রেটের বেলায়ও প্রযোজ্য। একজন ম্যাজিস্ট্রেট যখন বিচারকের চেয়ারে বসেন তখন তিনি বিচারক, তার আদালতে কোনো মন্ত্রী এলেও তিনি চেয়ার ছেড়ে দাঁড়াবেন না বা তাকে স্যার বলে সম্বোধন করবেন না। কিন্তু তিনি যখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষার বা মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় ব্যস্ত তখন কিন্তু সব আইনের বিধান দ্বারাই তিনি বাধ্য এবং সে অর্থে তার থেকে ঊর্ধ্ব পদমর্যাদার এক গণকর্মকর্তাকে যথোপযুক্ত সম্মান প্রদর্শন এবং তাকে স্যার বলে সংবোধন করা ছিল তার আইনি দায়িত্ব কেননা তখন তিনি গণকর্মচারী শৃঙ্খলা বিধান মানতে বাধ্য। তিনি নিশ্চয় উপসচিবের মর্যাদাভুক্ত নন, কেননা একটি জেলায় শুধু একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটই উপসচিবের মর্যাদাভুক্ত, যিনি সে জেলার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা ডিসি। সে অর্থে সেই ম্যাজিস্ট্রেটও গণকর্মচারী শৃঙ্খলাবিধান লঙ্ঘন করে থাকতে পারেন বলেই ভিডিওদৃশ্য থেকে প্রতীয়মান। ডা. জেনিও পুলিশকে গালি দিয়ে মারাত্মক অন্যায় করেছেন, যা তার মতো একজন দায়িত্বশীল মানুষের করা উচিত হয়নি। পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, ডা. জেনি তাকে ‘তুই’ বলেছেন। সেটা অবশ্য আমাকে পাঠানো ভিডিওতে শোনা যায়নি। যদি তা-ই হয়ে থাকে তবে ডা. জেনি নিশ্চয় অন্যায় করেছেন। তবে ডা. জেনি পুলিশ কর্মকর্তাকে বারবার তুমি বলেছেন। আমি যদিও এটা সমর্থন করি না এবং আমি নিজে আমার কোনো অধস্তন কর্মকর্তাকে তুমি বলি না, কিন্তু আমাদের দেশের অপ্রিয় বাস্তবতা হলো এই যে, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অধস্তনদের তুমি বলেই সম্বোধন করে থাকেন। বিশেষ করে মর্যাদার ব্যবধান অধিক হলে।

আমাদের দেশে উপসচিব মর্যাদার কোনো পুলিশ কর্মকর্তা, অর্থাৎ কোনো এসপি একজন ইন্সপেক্টরকে আপনি বলতে আমি কখনো শুনিনি, সে অর্থে উপসচিব মর্যাদার ডা. জেনি ইন্সপেক্টর মর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তাকে তুমি বললে সেটা আমাদের দেশের অর্থে নিন্দনীয় নয়। তবে একটি ব্রিটিশ সরকারের প্রতিষ্ঠানের সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে আমি বলতে পারি ‘স্যার’ বা ‘তুমি’ সম্বন্ধে যে কথাগুলো বললাম তা আমাদের দেশের পরিস্থিতির আলোকেই বললাম। কেননা বিলেতে কোনো কর্মচারী বা কর্মকর্তাই তার ঊর্ধ্বতনকে কখনো স্যার বলে সম্বোধন করে না, এমনকি কোনো মন্ত্রীকেও তারা স্যার বলে না। তারা ‘মিস্টার’ বলেই সম্বোধন করে আর ‘তুই’, ‘তুমি’, ‘আপনি’ এ ব্যবধান তো তাদের ভাষায় নেই-ই। তবে সেখানে পদমর্যাদা-নির্বিশেষে প্রত্যেকেই প্রত্যেককে সম্মান দেখায় এবং আমাদের সমাজেও তা হওয়া উচিত। ঔপনিবেশিক শাসনাবসানের কয়েক দশক পার হয়ে গেছে। কিন্তু এসব ঔপনিবেশিক প্রথা থেকে আমরা এখনো মুক্তি পেলাম না, এটা দুঃখজনক।

সব সাবেক ব্রিটিশ উপনিবেশে রেজিস্ট্রার জেনারেলসহ সুপ্রিম কোর্ট, হাই কোর্টের সব কর্মকর্তাই বিচারপতিদের আদালতের বাইরেও ‘মাই লর্ড’ বলে থাকেন, যা আমার কাছে কখনো ভালো লাগেনি। আমি তাদের শুধু স্যার সম্বোধন করতে বলি, কিন্তু তা তারা করেন না। কয়েক মাস আগে কলকাতা হাই কোর্টের এক বিচারপতি প্রকাশ্য আদালতেই বলেছিলেন, আদালতের বাইরে যেন বিচারপতিদের ‘মাই লর্ড’ বলা না হয়। বিলেতে আদালতের ভিতরে অবশ্য ‘মাই লর্ড’ বলা হলেও আদালতের বাইরে কিন্তু  বলা হয় না।

দেশ আজ এক ক্রান্তিলগ্ন দিয়ে পার হচ্ছে। একদিকে ধর্মব্যবসায়ী ’৭১-এর পরাজিত অপশক্তি এবং তাদের বংশধরদের দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র আর অন্যদিকে করোনার আক্রমণ। এ পরিস্থিতিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রক্ষার জন্য যে দুটি গোষ্ঠীর ভূমিকা অতিপ্রয়োজনীয় তাদের একটি হলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আকৃষ্ট পুলিশ এবং একই চেতনা-অনুরক্ত চিকিৎসকসমাজ। আমাদের পুলিশ যে কত দক্ষ এবং একাগ্রচিত্ত তার প্রমাণ আমি নিজেই পেয়েছিলাম কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় প্রকাশ করে বাড়ি ফেরার সময়।

আমার গাড়িতে তাক করে দুটি বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছিল। কিন্তু আমার গাড়িকে পাহারা দেওয়া দুজন পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের অভাবনীয় দক্ষতার ফলে বোমা দুটি আমার গাড়ি পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনি। তারা আমার জীবন বাঁচিয়েছিল, যে কথা আমি কোনো দিনই ভুলব না। ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতিদের জ্বালাও-পোড়ায়ের সময়ও কয়েকজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা আমাকে বাঁচিয়েছিলেন। যুদ্ধাপরাধীদের অন্যতম বিচারক বলে আমি তাদের টার্গেটে ছিলাম। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী আমাদের চিকিৎসক সম্প্রদায়ের দক্ষতা এবং দেশপ্রেমও স্বচক্ষে দেখার সুযোগ হয়েছে। সুনামগঞ্জের তা-বের সময় গুটিকয় পুলিশ সদস্যের ভূমিকা অসন্তোষজনক হলেও র‌্যাবের ডিজি এবং পুলিশ মহাপরিদর্শকের কঠোর ভূমিকা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সবার প্রশংসা পেয়েছে। সুতরাং এ তিন ব্যক্তির দ্বন্দ্ব যেন তাদের মধ্যেই সীমিত থাকে, তা যেন সম্প্রদায় পর্যায়ে না পৌঁছে সেদিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে, যে কথাটি মহামান্য হাই কোর্ট ব্যক্ত করেছেন। কিন্তু ভবিষ্যতের সতর্কতার স্বার্থে অবশ্যই তলিয়ে দেখতে হবে কেউ কোনো শাস্তিযোগ্য অপরাধ অথবা সরকারি কর্মচারী আচরণবিধির খেলাপ করেছেন কি না। যার জন্য তদন্ত করা অপরিহার্য।

পুলিশ কর্মকর্তা এবং ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব দুজনই তাদের দাবিমতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। তাদের কোনো ক্ষতি আমার প্রত্যাশার মধ্যে নেই। কিন্তু তারা যদি ডা. জেনির প্রতি আমাদের দেশে প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী ততটুকু সম্মান না দেখিয়ে থাকেন যে সম্মান দেখাতে প্রত্যেক গণকর্মকর্তা বিধিগতভাবে দায়বদ্ধ, তাহলে তাদের ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক করা অবশ্যই বাঞ্ছনীয় হবে। এতে তাদের চাকরির ক্যারিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, অন্যদিক তারা ভবিষ্যতে আইন ও বিধি মানতে বাধ্যতা প্রদর্শন করবেন। ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবের কথায় ভদ্রতার সুর ছিল বটে, কিন্তু আমাদের দেশের প্রথা অনুযায়ী একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে যেভাবে সম্বোধন করতে হয় তা তাকে করতে শুনিনি।

লেখক : আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি।

সর্বশেষ খবর